তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি

আমরা অনেকেই ঠিকমতো জানি না যে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি এবং এর গুরুত্বপূর্ণ উপকরণগুলো সম্পর্কে। তাই এডুয়েটিকের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে আজ আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি সে সম্পর্কে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নিবো। “যেকোনো প্রকারের তথ্যের উৎপত্তি, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চালন এবং বিচ্ছুরণে ব্যবহৃত সকল ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি” কে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে।



বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (Information & Communication Technology – ICT) বলা হয়। কারণ এই ২ প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। একটি আরেকটির পরিপূরক, তবে প্রতিযোগী নয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা আইসিটি (ICT) বর্তমান সময়ে একটি জনপ্রিয় বিষয়। তবে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি (IT) এতই জনপ্রিয় হয়েছে যে, অনেকের কাছেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিও তথ্য প্রযুক্তি (IT) নামে পরিচিত। কাজেই তথ্য প্রযুক্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা আইসিটি অনেকটা সমার্থক হিসাবে সর্বত্রই ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৯ অনুসারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলতে, “যেকোনো প্রকারের তথ্যের উৎপত্তি, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চালন এবং বিচ্ছুরণে ব্যবহৃত সকল ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি” কে বুঝায়।

ইউনেস্কো ব্যাংক থেকে প্রকাশিত ICT in Education Programme শীর্ষক বইয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে নিচের বাক্যগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

“The term ‘information and communication technologies’ (ICT) refers to forms of technology that are used to transmit, process, store, create, display, share or exchange information by electronic means.”

বিশ্বব্যাংক গ্রুপ কর্তৃক প্রকাশিত আইসিটি সেক্টর উন্নয়ন কৌশলপত্র অনুসারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হলো-

“ICT consists of hardware, networks, and media for collection, storage, processing, transmission, and presentation of information (voice, data, text, images)”.

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্র এবং পরিসর অনেক বড়। তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাধারণ টেলিফোন থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক স্মার্ট ফোন, সাধারণ কম্পিউটার থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক সুপার কম্পিউটার, রেডিও এবং টেলিভিশনসহ সকল ধরনের একমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা, ইন্টারনেট ও ওর্য়াল্ড ওয়াইড ওয়েব ইত্যাদি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আওতাভুক্ত। ইউনেস্কো ব্যাংকক থেকে প্রকাশিত ICT in Education Programme শীর্ষক বইতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আওতা বা পরিসর সম্পর্কে নিচের বাক্যগুলো উল্লেখ করা হয়েছে:

“The broad definition of ICT includes such technologies as radio, television, video, DVD, telephone (both fixed line and mobile phones), satellite systems, and computer and network hardware and software, as well as the equipment and services associated with these technologies, such as videoconferencing, email and blogs.”

বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতি এর তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অংশে নিচের বাক্যটি উল্লেখ করা হয়েছে:

“তথ্য প্রযুক্তিকে শুধুমাত্র কম্পিউটার বিজ্ঞানের মাঝে সীমিত না রেখে মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, নেটওয়ার্কিং কিংবা সকল তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ।”

কম্পিউটার কিংবা অন্য কোন যন্ত্রের মাধ্যমে ডেটাকে একস্থান হতে অন্য স্থানে কিংবা এক ডিভাইস হতে অন্য ডিভাইসে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া হচ্ছে ডেটা কমিউনিকেশন। কাজেই কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে এক স্থান হতে অন্যস্থানে নির্ভরযোগ্যভাবে ডেটা বা উপাত্ত আদানপ্রদান সম্ভব। ডেটা কমিউনিকেশন ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিকে যোগাযোগ প্রযুক্তি বা কমিউনিকেশন টেকনোলজি বলা হয়। যেমন: টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি।

বর্তমানে এমন কোন ক্ষেত্র পাওয়া যাবে না যেখানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নেই। মানুষের জীবনে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তি সহজতর করার লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তথ্য প্রযুক্তির বিবর্তনের পাশাপাশি যোগাযোগ প্রযুক্তিরও ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এক সময় রেডিও ব্যবহার করে মানুষ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করত, পরবর্তীতে টেলিভিশন, টেলিগ্রাফ, টেলিপ্রিন্টার, ফ্যাক্স, টেলিটেক্সট, টেলিফোন, মোবাইল ইত্যাদি চালু হয়েছে। মানুষের তথ্যের চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। মানুষ এখন যখন যেখানে প্রয়োজন তখন সেখানে সঠিক তথ্য পেতে চায়। যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া শুধুমাত্র তথ্য প্রযুক্তি মানুষের এই চাহিদার যোগান দিতে পারবে না। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি উভয়ের উন্নয়নের ফলে মানুষের এই চাহিদা পূরণ হচ্ছে। সার্বিকভাবে প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের ফলে তথ্য প্রযুক্তির সাথে যোগাযোগ প্রযুক্তির একীভুতকরণ করা হয়েছে।



প্রয়োগের উপর ভিত্তি করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এজন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

১. কম্পিউটিং ও ইনফরমেশন সিস্টেম: কম্পিউটিং সহ সকল ধরনের ইলেকট্রনিক ডেটা প্রসেসিং যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও এক্সপার্ট সিস্টেম ইত্যাদির ব্যবহার করা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আওতাধীন।

২. ব্রডকাস্টিং: রেডিও এবং টেলিভিশন যা বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে একমুখী তথ্য সম্প্রচার করে থাকে তা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্ত।

৩. টেলিকমিউনিকেশনস: মূলত সকল ধরনের টেলিফোনি এবং ব্যবসায় থেকে ব্যবসায়ে উভয়মুখী ডেটা কমিউনিকেশন করে থাকে। ফিক্সড টেলিফোন ও মোবাইল বা সেলুলার ফোনসহ সকল ধরনের টেলিযোগাযোগ আইসিটির আওতাধীন।

৪. ইন্টারনেট: টেলিকমিউনিকেশন অবকাঠামো ব্যবহার করে গড়ে উঠা আন্তর্জাতিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো ইন্টারনেট, যাতে সংযুক্ত থাকলে যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে তা ব্যবহার করা যায়, তা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বা আইসিটির আওতাধীন।

মানব সমাজে তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তির গ্রহণ ও ব্যবহারের অগ্রগতি নিম্নলিখিত কয়েকটি ধাপে সংগঠিত হয়। যথা:

১. বেসিক কমিউনিকেশন: ফিক্সড টেলিফোন লাইন, মোবাইল ফোন, ফ্যাক্স, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি। এটি আইসিটি গ্রহণ ও ব্যবহারের প্রাথমিক ধাপ। মানুষ মৌলিক যোগাযোগের কাজে এই প্রযুক্তির প্রয়োগ করেন।

২. বেসিক ইনফরমেশন টেকনোলজি: বেসিক সফটওয়্যার সমৃদ্ধ কম্পিউটার যা প্রিন্টারের সঙ্গে সংযুক্ত। এটি আইসিটি গ্রহণ ও ব্যবহারের প্রাথমিক ধাপ। এই ধাপে মানুষ দৈনন্দিন কর্মকান্ডে কম্পিউটিংকে কাজে লাগায়।

৩. অ্যাডভান্সড কমিউনিকেশন: ইমেইল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ভিডিও কনফারেন্সিং, ইন্ট্রানেট ফাইল শেয়ারিং, ওয়েবসাইট তৈরি, ই-কমার্স, ভিওআইপি ইত্যাদি।

৪. অ্যাডভান্সড ইনফরমেশন টেকনোলজি: অ্যাডভান্স সফটওয়্যার সমৃদ্ধ কম্পিউটার যেমন ডেটাবেজ, ইনফরমেশন সিস্টেম, এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্লানিং, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, কাস্টমার রিলেশনশীপ ম্যানেজার ইত্যাদি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ:

১. কম্পিউটার

২. রেডিও

৩. টেলিভিশন

৪. ইন্টারনেট

৫. সফটওয়্যার



৬. হার্ডওয়্যার

৭. ডেটা

৮. নেটওয়ার্ক

৯. প্রক্রিয়া

১০. দক্ষ জনশক্তি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রসমূহ

১. তথ্য আদান-প্রদান

২. তথ্য সংরক্ষণ প্রযুক্তি

৩. তথ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি

৪. শিক্ষাক্ষেত্রে

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

অনলাইনে বই পড়ার

ডিজিটাল লাইব্রেরীর সুবিধা ও প্রয়োজনীয়তা

আজকের আর্টিকেলে আমরা ডিজিটাল লাইব্রেরীর সুবিধা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানব। যেখান থেকে আপনারা ডিজিটাল লাইব্রেরী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *