আইফেল টাওয়ারের রহস্যময় ইতিহাস

আইফেল টাওয়ারের রহস্যময় ইতিহাস : পৃথিবীতে মানব সৃষ্ট সকল আশ্চর্যগুলোর মধ্যে সুউচ্চ স্থাপনাগুলো অন্যতম। কারিগরের হাতে তৈরি দানবাকৃতির এই স্থাপনাগুলো যেকোনো লোকের নজর কাড়তে বাধ্য।

ফ্রান্সের প্যারিস শহরের যে নির্মাণ সকলের নজর কেড়েছে, তা হলো এমনই একটি সুউচ্চ স্থাপনা। অতীতে মানুষের নির্মিত সবচেয়ে উঁচু নিদর্শন হিসেবে যা সকলের কাছে পরিচিতি অর্জন করে ।



জি, আজ আমরা কথা বলবো ফ্রান্সের অন্যতম জনপ্রিয় লৌহ কাঠামো আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে। আইফেল টাওয়ারের বিয়ে এবং এর নানা অজানা তথ্য জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।

আইফেল টাওয়ারের রহস্যময় ইতিহাস

১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পরবর্তী ৪০ বছর যাবত এটিই ছিল পৃথিবীর সুউচ্চ স্থাপনা। বর্তমানেও পৃথিবীর জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গুলোর মধ্যে অন্যতম এই আইফেল টাওয়ার। আইফেল টাওয়ার এর আরেক নাম হলো “la tour eiffel”। এটি অবস্থিত প্যারিস শহরের “champ De Mars ” নামক একটি স্থানে।

এর নির্মাতা গুস্তাভো আইফেল সে সময় রেলের জন্য সেতুর নকশা প্রণয়ন করতেন এবং টাওয়ারটি নির্মাণে তিনি সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছিলেন। স্টিভেন সাভেস্টার,মোরিস কোকলেন ও এমিল নুগাইয়ার এর তৈরিকৃত নকশা এবং ৩০০ শ্রমিকের পরিশ্রমের মাধ্যমে গড়ে ওঠে ৩২০ মিটার বা ১০৫০ ফুট উচ্চতার এই টাওয়ারটি।

এই আইফেল টাওয়ার ১৮, ০৩৮ খণ্ড ছোট/ বড় লোহার কাঠামো দিয়ে তৈরি হয়েছিল। আর এই ছোট/ বড় লোহার খণ্ড জোড়া দিয়ে টাওয়ার তৈরি করতে মোট ২৫ লক্ষ নাট বল্টুর দরকার হয়েছিল।

গুস্তাভ আইফেল প্রথমে স্পেনে এই টাওয়ার তৈরির প্রস্তাব দেয়। তবে তারা এই বিশাল স্থাপনাকে অদ্ভুত মনে করে প্রত্যাখ্যান করে। ১৮৮৯ সালে ফ্রান্সের বিশ্ব মেলার প্রবেশ পথ হিসেবে সাময়িক সময় এর জন্য এই টাওয়ার তৈরি করা হয়। পরে বেতার মাধ্যম ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হিসেবে ব্যবহার হলে এই টাওয়ার এর স্থায়িত্ব প্রদান করা হয়।

১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন হিটলার প্যারিস শহর দখল করে নেয় তখন প্যারিস শহরবাসী লিফটের তার কেটে দেয় যার ফলে আইফেল টাওয়ার দেখার জন্য হিটলারকে সিঁড়ি ব্যবহার করে উপরে উঠতে হয়। এর জন্য বলা হয় হিটলার প্যারিস জয় করতে পারলেও আইফেল টাওয়ার জয় করতে পারেনি।



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে জার্মানি যখন পরাজয়ের মুখে তখন হিটলার প্যারিসের আইফেল টাওয়ার ধ্বংসের নির্দেশ দেয়। তবে হিটলারের এক সেনা নায়ক “Dietrich von choltitz” তার কথা অমান্য করে এবং এর ফলস্বরূপ পৃথিবীর বুকে আজও আইফেল টাওয়ার অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।

আইফেল টাওয়ারটি ৩ তলা বিশিষ্ট। প্রথম তলায় পর্যটকদের জন্য বসার স্থান এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যেখান থেকে পর্যটকেরা পুরো প্যারিস শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।

আইফেল টাওয়ার এর নির্মাতা ১ হাজার ফিট উপরে অর্থাৎ তৃতীয় তলায় নিজের জন্য একটি প্রাইভেট রুম তৈরি করেন। যেখানে তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন বিখ্যাত মানুষের যাতায়াত ছিল। তাই তাদের বিভিন্ন আবিষ্কার এই প্রাইভেট রুমের সংরক্ষণ করা হয়েছে।

পর্যটকরা এই রুম পরিদর্শনের মাধ্যমে আবিষ্কারগুলো দেখতে পারেন। এই টাওয়ারে ১৬৬৫ টি সিড়ি আছে। প্রথম ও দ্বিতীয় তলা উঠার জন্য সিড়ি এবং লিফট ব্যবহার করা যায়। তবে তৃতীয় তলা ওঠার জন্য শুধুমাত্র লিফট ব্যবহার করতে হয়। এই লিফট বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায় না।

লিফটে ওঠার জন্য ১৯ ইউরো খরচ করতে হয়, যা বাংলাদেশী টাকায় ১৮০০ টাকা। এই টাওয়ারটির ওজন ১০ হাজার টন। যেহেতু এই আইফেল টাওয়ার সম্পূর্ণ লোহার তৈরি তাই এটিকে মরিচার হাত থেকে রক্ষা করতে ৭ বছর পরপর রং করা হয়।

সম্পূর্ণ আইফেল টাওয়ার রং করতে ৬০ টন রংয়ের প্রয়োজন হয়, যা ১০ টি হাতির ওজনের সমান। এ পর্যন্ত টাওয়ারটি কে মোট ১৮ বার রং করা হয়েছে।

এই পুরো আইফেল টাওয়ারকে বাল্ব দিয়ে সাজাতে মোট ২০ হাজার বাল্বের প্রয়োজন হয়। মজার ব্যাপার হলো বর্তমানে আইফেল টাওয়ারের ৩০ টির বেশী রেপ্লিকা রয়েছে। অর্থাৎ আইফেল টাওয়ারের মতো ৩০ টিরও বেশি নকল স্থাপনা আছে। বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার জনের বেশি লোক আইফেল টাওয়ারে আরোহন করে।

আইফেল টাওয়ারের বিয়ে

আমরা জানি বিবাহ সাধারণত নারী এবং পুরুষের মধ্যে হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হলো ২০০৭ সালে এক নারীর সাথে লৌহ স্তম্ভ অর্থাৎ আইফেল টাওয়ারের বিবাহ সম্পন্ন হয়।

পরবর্তীকালে এই নারী তার নাম পরিবর্তন করে erika la tour eiffel রাখেন। আপনারা শুনে অবাক হবেন যে গ্রীষ্মকালে আইফেল টাওয়ারের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায় । রেলের পাতের মত আইফেল টাওয়ারের দৈর্ঘ্য ৬ ইঞ্চি বেড়ে যায়।

আবার সূর্য অস্ত গেলে বা তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে এটি পূর্বে অবস্থায় ফিরে আসে। রাতে আইফেল টাওয়ার সম্পূর্ণ বাল্ব দিয়ে সাজানো হলে সে সময়ে জনসাধারণের এর ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ। রাতের বেলা এর ছবি তোলা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে মনে করা হয়।

আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে আরেকটি অবাক করা তথ্য হলো ভিক্টর লাস্টিং নামে এক ব্যক্তি জাল কাগজপত্র তৈরি করে পুরো আইফেল টাওয়ারকে এক লোহা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেন। তবে তিনি পরে ধরা পড়ে যান।



৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১২ সালে ফ্রাঞ্জ রেইচেল্ট নামক একজন ফরাসি দর্জি তার নিজের তৈরী প্যারাস্যুট নিয়ে আইফেল টাওয়ারের ৬০ মিটার উচ্চতা থেকে লাফিয়ে পড়েন এবং মৃত্যু বরণ করেন। ৩ জানুয়ারি ১৯৫৬ সালে টাওয়ারের ঊর্ধভাগ আগুনে পুড়ে বিনষ্ট হয়। পরে এটিকে সংস্কার করা হয়।

১৯১০ সালে “ফাদার থিওডর উলফ” এই টাওয়ারের পাদদেশ এবং চূড়ার বিকিরিত শক্তি পরিমাপ করেন যা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। আইফেল টাওয়ারের মাধ্যমে কসমিক রশ্মি (Cosmic Ray) তখনই প্রথম আবিষ্কার হয়।

এই স্থাপনাটি তৈরি হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে একরকমের উন্মাদনা তৈরি করে দেয়। ১৯৩০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে ক্রাইসলার ভবন তৈরী হবার পর আইফেল টাওয়ার পৃথিবীর সর্বোচ্চ কাঠামোর মর্যাদা হারায়।

তবে ফ্রান্সের প্যারিস শহরের বিভিন্ন নিদর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই আইফেল টাওয়ার। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আজও আইফেল টাওয়ার সকলের কাছে অনেক জনপ্রিয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে এই অসাধারণ নিদর্শন দেখার জন্য।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

জসিম উদ্দীন – MCQ Questions

জসিম উদ্দীন – MCQ Questions

জসিম উদ্দীন – MCQ Questions ১. প্রশ্নঃ ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ এর রচয়িতা কে? ক. রবীন্দ্রনাথ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *