জীবনী: জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল

জীবনী: জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল

চুম্বক, তড়িৎ ও তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গতত্ত্বের উপর যার গবেষণা এককালে একটা প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছিল সেই বিজ্ঞানীর নাম জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল। তড়িৎ বিজ্ঞানে তিনি যে সূত্রটি আবিষ্কার করেছিলেন সেই সূত্রটি “ম্যাক্সওয়েলের কর্ক স্ক্রু সূত্র” নামে প্রসিদ্ধ।

এই সূত্রের সাহায্যে তড়িৎ প্রবাহের ফলে চুম্বক শলাকার দিক নির্ণয় করা হয়ে থাকে। ম্যাক্সওয়েল পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণ করেন, পরিবাহী তারের মধ্য দিয়ে যে দিকে তড়িপ্রবাহ চালনা করা হয় উদাহরণস্বরূপ একটি ডান পাকের কর্ক স্ক্রুকে পরিবাহী তার বরাবর সেই দিকে ঘোরান হলে হাতের বুড়ো আঙ্গুলটি যে দিকে ঘুরে চুম্বক শলাকার উত্তর মেরু সেই দিকে বিক্ষিপ্ত হয।

ম্যাক্সওয়েলের এই আবিষ্কারটি তড়িৎ বিজ্ঞানে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। ম্যাক্সওয়েলের যে আবিষ্কারটিকে যুগান্তকারী আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে সেটি তড়িৎচুম্বক তরঙ্গতত্ত্ব। প্রকৃতপক্ষে উক্ত তরঙ্গতত্ত্ব সম্বন্ধে প্রথম সঠিক ধারণা দিয়েছিলেন তিনি। তিনিই প্রথম বলেছিলেন, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে অথবা চুম্বক ক্ষেত্রে সামান্যতম বিশৃঙ্খলা ঘটলেই আলোর গতির সমান একটি তড়িৎচুম্বক তরঙ্গ বেরিয়ে আসে। ঐ তরঙ্গের ধর্মও সাধারণ আলোর ধর্মের মতই অর্থাৎ আলোকের মতো ওদেরও হয় প্রতিফলন, প্রতিসরণ, পোলারাইজেশন প্রভৃতি।

ম্যাক্সওয়েলের উপরোক্ত মতবাদের যথার্থ যাচাই করতে গিয়েই একদিন বিজ্ঞানী হেনরিক হাৎর্স ল্যাবরেটরিতে উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছিলেন “বেতার তরঙ্গকে” যা নিঃসন্দেহে আধুনিক বিজ্ঞানের করেছে গোড়াপত্তন। বিজ্ঞানীদের মতে আধুনিক বিজ্ঞান নামক বিশাল মহীরূহটি দাঁড়িয়ে আছে তিনটি বিশেষ নিয়মের উপর। প্রথম নিয়মটি নিউটনের গতিবিজ্ঞান, দ্বিতীয়টি ম্যাক্সওয়েলের বিদ্যুৎচুম্বক তরঙ্গতত্ত্ব এবং তৃতীয়টি তাপ গতিবিদ্যার সূত্রাবলী।

ঐ নিয়মগুলির দ্বারাই বিজ্ঞানীরা পার্থিব নিয়ম-শৃঙ্খলা ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হয়েছেন এবং বহু আবিষ্কারের দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছে বিজ্ঞান। সেই আবিষ্কারগুলি আবার একটি বড় রকমের বিস্ময়। তাই বিজ্ঞানের ম্যাক্সওয়েল এর অবদানের কোন তুলনা হয় না। জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল ২৮৩১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ ই নভেম্বর এনিবরায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন প্রখ্যাত আইনজীবী।

তবুও বিজ্ঞান এর প্রতি ছিল তার অনুরাগ। তাই চেয়েছিলেন, পুত্রকে তিনি বিজ্ঞান পড়াবেন। ম্যাক্সওয়েলের লেখাপড়ার যথেষ্ট সুব্যবস্থা করেছিলেন তার পিতা। এমনকি অবসর সময় নিজেই বসতেন ছেলেকে পড়াতে। একমাত্র পুত্র ছিলেন বলে হয়তো পিতার স্নেহের মাত্রা একটু বেশিই ছিল। তথাপি পুত্রের উন্নতির জন্য শাসন করতেও কণ্ঠিত হতেন না।



কিন্তু বাল্যকালে পিতা সব রকমের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল। তার একমাত্র কারণ, তিনি ছিলেন ভয়ানক লাজুক। মানুষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে লজ্জা, স্কুলের শিক্ষক মহাশয় এবং সহপাঠীদের সামনের লজ্জা, এমন কি স্নেহশীল পিতার দিকেও তাকাতে তার ছিল লজ্জা। বিব্রত বোধ করলেন পিতা লজ্জা দূরীভূত হবে বিবেচনা করে ভর্তি করে দিলেন “এডিনবরা একাডেমী” নামক একটি ভালো শিক্ষায়তনে।

তবুও কিছুতেই কিছু হলো না। বছর বছর ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা সার হল। পিতা এবার সত্যিই বড় চিন্তিত হয়ে পড়লেন। শেষে অনেক চিন্তা করে পুত্রকে রাখলেন সবসময় নিজের কাছে। আদালতে গেলে সঙ্গে থাকতেন ম্যাক্সওয়েল, সভাসমিতিতে যোগদানের সময় সঙ্গী করেন পুত্রকে, বেড়াতে গেলে— বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে হলে— হোটেল রেস্তোরাঁ সব জায়গায় ম্যাক্সওয়েল।

এইভাবে কাটল বেশ কিছুদিন। পিতার চেষ্টা সফল হল। তের-চৌদ্দ বছর বয়সের সময় ম্যাক্সওয়েলের লাজুক স্বভাব কিছুটা পরিবর্তন হল। ততদিনে অর্থাৎ বেশ দেরিতে প্রতিভার স্ফূরণ হলো তার। একদিন স্কুলের পাঠ শেষ করে কলেজে ভর্তি হলেন ম্যাক্সওয়েল। পিতা তার জন্য তৈরি করেছেন সুন্দর একটি গবেষণাগা। কিশোর ম্যাক্সওয়েলও পিতার উৎসাহে মেতে উঠলেন পড়াশোনা ও গবেষণায়।

মাত্র ষোল বছর বয়সে ম্যাক্সওয়েলের উদ্ভাবনী শক্তি দেখে বিস্মিত হয়ে গেলেন পিতা। যে কয়েকটি যন্ত্র নির্মাণ করেছেন ম্যাক্সওয়েল, সেগুলো পিতা একদিন দেখতে দিলেন তৎকালীন একজন নামকরা বিজ্ঞানী “ফোরবীজ” কে। ফোরবীজ সেগুলি দেখে বালকের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং প্রেরণ করেন লন্ডনের রয়েল সোসাইটিতে। শোনা যায়, রয়েল সোসাইটিও ম্যাক্সওয়েলের প্রশংসা করে সার্টিফিকেট প্রদান করেছিলেন।

সতের বছর বয়সের সময় ম্যাক্সওয়েল এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন। পাশ করার পর উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে বেশ কিছুদিন চুম্বক ও তড়িৎ গবেষণা করেন। অতঃপর উন্নততর গবেষণার জন্য তিনি যোগদান করেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানেই ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে তিনি আবিষ্কার করেন তার প্রসিদ্ধ “কর্ক স্কু সূত্রটি।”

কথিত আছে ক্যামব্রিজে অবস্থানকালে ম্যাক্সওয়েল তৎকালীন ইংল্যান্ডের সেরা বিজ্ঞানী ফ্যারাডের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন এবং তারই অনুপ্রেরণায় তড়িৎ চুম্বক সম্বন্ধে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ম্যাক্স ওয়েল কেবলমাত্র পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন ন, অংক শাস্ত্রে এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানেও ছিল তার সমান দক্ষতা।

তার বহুমুখী প্রতিভার জন্য ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে কিংস কলেজ তাকে আমন্ত্রণ জানায় এবং ম্যাক্সওয়েলও গ্রহণ করেন এখানকার পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যার প্রধান অধ্যাপকের পদ। কিংস কলেজে অধ্যাপনা কালে ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ম্যাক্সওয়েল আবিষ্কার করেন আলোকের তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গতত্ত্ব।



যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। বিভিন্ন শ্রেনির সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। নতুন নতুন সব শিক্ষামূলক ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন।

বি: দ্র: তোমার নিজের রচিত কবিতা, সাহিত্য বা যেকোনো শিক্ষামূলক লেখা পাঠিয়ে দাও এডুয়েটিক’র কাছে। এডুয়েটিক প্রকাশ করবে তোমার প্রিয় লেখাটি।

এগুলো দেখুন

জোসেফ লিস্টার

জীবনী: জোসেফ লিস্টার

জীবনী: জোসেফ লিস্টার ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকেও হাসপাতালর শল্যচিকিৎসকরা একবাক্যে স্বীকার করতেন যে, একটি রোগীকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *