জীবনী: আল বাত্তানী

আল বাত্তানী

জীবনী: আল বাত্তানী

যে মুসলিম মনীষী সর্ব প্রথম নির্ভুল পরিমাপ করে দেখিয়ে ছিলেন যে, এক সৌর বছরে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড হয়, তার আসল নাম হল আবু আব্দুল্লাহ ইবনে জাবির ইবনে সিনান তিনি আল বাত্তানী। তিনি আল বাত্তানি নামেই বেশি পরিচিত। তার সঠিক জন্ম তারিখ জানা যায়নি। যতদূর জানা যায় ৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ।

মেসোপটেমিয়ার অন্তর্গত বাত্তান নামক স্থানে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জন্ম স্থানের নামে তিনি বিশেষভাবে খ্যাতি লাভ করেন। তার পিতার নাম জাবের ইবনে সানান। তার পিতাও ছিলেন তৎকালীন সময়ের একজন বিখ্যাত পণ্ডিত ও বিজ্ঞানী। আল বাত্তানী পিতার নিকটেই প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। শৈশব কাল থেকেই শিক্ষা লাভের প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ।

তিনি যে শিল্প কর্মেই হাত দিতেন তা নিখুঁত ভাবে শুরু করতেন এবং এর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন। পিতার নিকট প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর উচ্চ শিক্ষার জন্যে তিনি ইউফ্রেটিস নদীর নিকটবর্তী রাক্কা নামক শহরে গমন করেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও পন্ডিত হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন।

আল বাত্তানীর বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর খলিফা মুতাওয়াক্কিলের ইন্তেকাল হয়। পরবর্তীতে দেশের রাজনৈতিক উত্থান পতনের কারণে তরুণ বয়সেই তাকে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়তে হয় এবং সিরিয়ার গভর্নর পদে অধিষ্ঠিত হন। রাষ্ট্রীয় কাজে চরম ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি তার জ্ঞান-বিজ্ঞান সাধনার কোন ক্ষতি করেননি। রাজধানী রাক্কা ও এস্টিয়োক থেকে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানে গবেষণা চালাতেন।

তিনি ছিলেন একজন অঙ্ক শাস্ত্রবিদ ও শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানে চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র প্রভৃতির প্রকৃতি, গতি ও সৌরজগৎ সম্বন্ধে তার সঠিক তথ্য শুধুমাত্র অভিনবই নয়, জ্যোতির্বিজ্ঞানে টলেমী সহ পূর্বতন বহু বৈজ্ঞানিক এর ভুলও তিনি সংশোধন করে দেন। সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কিতল টলেমী যে মতামত ব্যক্ত করেছেন, আল বাত্তানী তা সম্পূর্ণ ভুল বলে বাতিল করে দিতে সক্ষম হন।



তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, সূর্যের আপাত কৌণিক ব্যাসার্ধ বাড়ে ও কমে। নতুন চন্দ্র দেখার ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণ নতুন ও নির্ভুল বক্তব্য পেশ করেন। সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ সম্পর্কে ও তার বক্তব্য সুস্পষ্ট। আল বাত্তানী তার নতুন উদ্ভাসিত যন্ত্র দিয়ে প্রমাণ করে দিলেন যে, সূর্য স্থির বলে এতদিনের প্রচলিত টলেমীর মতবাদটি সত্য নয়। সূর্য তার নিজস্ব কক্ষে গতিশীল।

আল বাত্তানী আরো প্রমাণ করেন যে, টালিমীর সময় থেকে তার সময় পর্যন্ত সূর্যের ১৬.৪৭ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং সূর্য স্থির নিশ্চল নয় এবং তার নিজস্ব কক্ষে গতিশীল। আল বাত্তানী টলেমীর প্রচারিত আরো বহু মতবাদকে ভুল বলে প্রমাণ করেন। তিনি অক্ষর মালাকে সংখ্যার প্রতীক হিসেবে ব্যবহারমূলক একটি “জিজ” তালিকা তৈরি করেন। এটি ইউরোপীয় পণ্ডিতদের দ্বারা অনূদিত হয়ে তিন খন্ডে প্রকাশিত হয়।

আল বাত্তানীই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন যে, ত্রিকোণমিতি হচ্ছে একটি স্বয়ং স্বাধীন বিজ্ঞান। তিনি গোলাকার ত্রিকোণমিতির কিছু কিছু সমস্যার অত্যন্ত বিস্ময়কর সমাধান দিয়েছেন। অন্যান্য বিজ্ঞানিকগণ ত্রিকোণমিতির প্রতি এতদিন অমনোযোগী ছিলেন আল বাত্তানীর অসাধারণ প্রতিভার সংস্পর্শ নির্জীব ত্রিকোণমিতি সজীব হয়ে উঠে।

সাইন, কোসাইনের সঙ্গে ট্যানজেস্টের সম্পর্ক আল বাত্তানীই প্রথম আবিষ্কার করেন। ত্রিভুজের বাহুর সঙ্গে কোণের ত্রিকোণমিতি সম্পর্কও তারই আবিষ্কার। বাত্তানীই সর্বপ্রথম অংক শাস্ত্রে বহু গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রিক স্বর গ্রামের পরিবর্তে লম্বের ব্যবহার করেন। এক কথায় আল বাত্তানীর জীবন ছিল জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিস্তৃত।

তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞান ত্রিকোণমিতি ও অংক শাস্ত্রে বহু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। তার গ্রন্থগুলো ইউরোপের বিভিন্ন ভাষা অনূদিত হয়েছে। মুসলিম মনীষীগণের জ্ঞান-বিজ্ঞান দিয়েই অমুসলিমগণ আজ জ্ঞান-বিজ্ঞানের শীর্ষে উন্নীত হয়েছে। অপরদিকে মুসলিম জাতি তাদের পুরুষদের জ্ঞান-বিজ্ঞান সাধনা কে উপেক্ষা করে আজ অমুসলিমদের মুখাপেক্ষী হয়ে আছে। এ মহা মনীষী ৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ৭২ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন।



যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। বিভিন্ন শ্রেনির সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। নতুন নতুন সব শিক্ষামূলক ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন।

বি: দ্র: তোমার নিজের রচিত কবিতা, সাহিত্য বা যেকোনো শিক্ষামূলক লেখা পাঠিয়ে দাও এডুয়েটিক’র কাছে। এডুয়েটিক প্রকাশ করবে তোমার প্রিয় লেখাটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *