জীবনী: আলফ্রেড নোবেল

আলফ্রেড নোবেল

যে নোবেল পুরস্কার বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান ও স্বীকৃতি সেই পুরস্কার দেয়া হয় যার নামে এবং অর্থে তিনিই হলেন বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল । তিনি কে ছিলেন, তার আত্ম পরিচয়ও তিনি নিজেই দিয়েছেন এভাবে। আলফ্রেড নোবেল একজন বিশ্ববিশ্রুত ও প্রতিভাশালী ব্যক্তি তিনি সুইডেনে জন্মগ্রহণ এবং আমেরিকা ও রাশিয়াতে শিক্ষালাভ করেন।

তিনি উগ্র বিস্ফোরক কারখানার প্রতিষ্ঠাতা, নাইট্রোগ্রিসারিন ও বিস্ফোরক দ্রব্যের তিনিই প্রথম আবিষ্কারক ও ব্যবহারক। তিনিই ডিনামাইটের আবিষ্কারকে এবং সুইডেন, জার্মানি, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইটালি প্রভৃতি দেশের ডিনামাইট নির্মাতা। শিল্পাঞ্চলে বিস্ফোরক কারখানা নির্মাণ করে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, সে যুগে উন্নত ধরনের বিস্ফোরক আবিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা কি অপরিসীম।

অথচ তিনি তার জীবন সম্পর্কে আবার লিখেছিলেন আরেক মজার কথা। তার এক ভাই যখন তাকে আত্মজীবনী লিখতে অনুরোধ করেন তখন তিনি পরিহাস করে নিজের সম্পর্কে লিখেছিলেন-

১. আলফ্রেড নোবেল: কোনো ডাক্তারের উচিত ছিল জন্ম মুহূর্তে তার শোচনীয় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটানো।

২. প্রধান গুণাবলী: নিজে কখনো কারো পক্ষে বোঝা স্বরূপ ছিলেন না। তিনি রীতিমতো নখ পরিষ্কার রাখতেন।

৩. প্রধান দোষাবলী: তার কোনো পরিবার ছিল না। তিনি ছিলেন বদরাগী ও পেট রোগা।

৪. শুধুমাত্র একটি ইচ্ছে ছিলো: যাতে জীবন্ত সমাধিস্থ না হন।

৫. সবচেয়ে বড় পাপ: তিনি অর্থলোলুপ ছিলেন না।

৬. স্মরণীয় ঘটনা: কিছুই না।

১৮৯৩ সালেও তিনি নিজের সম্পর্কে করেছিলেন এমনি আরো একটি মজার কান্ড। এই বছর তাকে সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি দেয়া হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষের অনুরোধে নিজের সম্পর্কে লিখলেন নিম্নস্বাক্ষরকারী ব্যক্তি ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে ২১ শে অক্টোবর তারিখে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি জীবনে কখনো উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেননি। তিনি নিজের চেষ্টার বিদ্যার্জন করেছেন। তিনি ফলিত রসায়ন বিজ্ঞানে নিজেকে আবিষ্কার করেন। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে থেকে রয়েল সোসাইটি (লন্ডন) এবং Societe des engenieurs civils in paris- এর সদস্য। তার একমাত্র প্রকাশনা ইংরেজি ভাষায় বক্তৃতা দান এবং রৌপ্যপাদক লাভ।



একমাত্র প্রকাশনা তার শুধু বক্তৃতা দেওয়া নয়। তিনি একবার ইংরেজিতে নাকি মস্ত বড় একটি কবিতাও লিখেছিলেন। এছাড়াও পৃথিবীর অনেকগুলো ভাষায় তিনি দক্ষ ছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে নোবেল ছিলেন খুব খিটখিটে মেজাজের। বিস্তর ধন সম্পদের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তার মনে শান্তি ছিল না।

শারীরিক দিক দিয়েও তিনি অসুস্থ থাকতেন প্রায়ই। মাথা ধরার রোগ ছিল তার। তাই নিজের অফিসে কাজ করার সময়েও তাকে মাথায় ব্যাণ্ডেজ বেঁধে রাখতে হতো। এই ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্যই তিনি প্রায় সারাক্ষণই বিষণ্ণতায় ভুগতেন। এমন করে ধীরে ধীরে তিনি সবকিছুর উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন।

কারো সাথে মেলামেশা পছন্দ করতেন না তার কেমন যেন মনে হতো সব লোক শুধু স্বার্থের জন্যই তার কাছে আসে। এই বিচিত্র মানুষ আলফ্রেড নোবেল জন্মগ্রহণ করেন সুইডেনের স্টকহোমের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে, ১৮৩৩ সালের ২১ শে অক্টোবর তারিখে। নোবেলের পিতা ইম্যানুয়েল নিজেও ছিলেন একজন বিজ্ঞানী।

কাঠের আসবাবপত্র ও কাঠের অন্যান্য জিনিসপত্র তৈরির অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিস যা আজকাল ব্যাপক ব্যবহৃত হয় প্লাইউড তারই আবিষ্কার। নোবেলের বাবা ইম্যানুয়েল সাহেবই প্রথমে নাইট্রোগ্লিসারিন তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। তিনি প্রথমে গ্লিসারিন এবং নাইট্রিক এসিডের মিশ্রণ ঘটিয়ে তৈরি করেন নাইট্রোগ্লিসারিন।

তখন এই তেলকে বলা হতো বিস্ফোরক তেল। সামান্য আঘাত পেলেই এই তেলে প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটতো।
এই সংকটময় মুহূর্তে এগিয়ে যুব বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল। তিনি এই তেলের সাথে কিজেলগাঢ় মিশিয়ে একে ত্রুটিমুক্ত করেন। এটাই হলো আলফ্রেড নোবেলের আবিষ্কৃত ডিনামাইট।

১৮৬৫ সালে তিনি একজন জার্মান অংশীদারের সহযোগিতায় নোবেল এন্ড কোং নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন অন্য একটি কোম্পানি। পরে নোবেল তার বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় বাকুতে একটি তেল কোম্পানির স্থাপন করেন। এই তেল কোম্পানি থেকে নোবেল উপার্জন করেন প্রচুর অর্থ।

উইল অনুসারে তিনি এই পুরস্কার দেয়ার ভার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর ন্যাস্ত করে যান। পদার্থ ও রসায়ন শাস্ত্রের ভার পড়ে স্টকহোমের বিজ্ঞান একাডেমীর উপর। সাহিত্যে পুরস্কারের দায়িত্ব নেন সুইডিস একাডেমী, চিকিৎসা শাস্ত্রের পুরস্কারের ভার পড়ে ক্যারোলিন মেডিকেল ইনস্টিটিউট এর উপর এবং শান্তির জন্য পুরস্কারের ভার দেয়া হয় নরওয়ের পার্লামেন্ট কর্তৃক নিয়োজিত পাঁচ সদস্যের একটি কমিটির উপর।

বিজ্ঞানী নোবেল মারা যান ১৮৯৬ সালের ১০ই ডিসেম্বর তারিখে। তার মৃত্যু দিবস ১০ই ডিসেম্বর তারিখে ঘোষণা করা হয় এই পুরস্কার। পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তিকে দেওয়া হয় একটি মোটা অংকের চেক, নোবেলের প্রতিকৃতি অঙ্কিত একটি সোনার মেডেল এবং একটি সার্টিফিকেট। তিনি মরেও অমর হয়ে আছেন। বিশ্বের মানুষ চিরদিন তাকে স্মরণ করবে শ্রদ্ধার সাথে।



যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। বিভিন্ন শ্রেনির সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। নতুন নতুন সব শিক্ষামূলক ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন।

বি: দ্র: তোমার নিজের রচিত কবিতা, সাহিত্য বা যেকোনো শিক্ষামূলক লেখা পাঠিয়ে দাও এডুয়েটিক’র কাছে। এডুয়েটিক প্রকাশ করবে তোমার প্রিয় লেখাটি।

Leave a Comment