জীবনী: ইউক্লিড

ইউক্লিড

আমাদের স্কুল, কলেজে আজ পর্যন্ত যে ধরনের জ্যামিতি পড়ানো হয় তার আবিষ্কারক হলেন প্রাচীন অংক শাস্ত্রবিদ ইউক্লিড । তাই ইউক্লিডকেই বলা হয় জ্যামিতির জনক। যিশুখ্রিস্টের জন্মে ৩০০ বছর আগে যেসব জ্যামিতিক সূত্র প্রচলিত ছিল তিনি সেগুলোকে সুশৃংখলভাবে সংগ্রহ করে গ্রন্থকারে প্রকাশ করেন তিনি মোট ১৩ খন্ডে এই সূত্রগুলো সংকলন করেন।

প্রবাদ আছে যে, ইউক্লিডের এই অংক শাস্ত্রের গ্রন্থটি এত ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল যে, প্রচারের দিক থেকে বাইবেলের পরেই হল এর স্থান। ইউক্লিডের মৃত্যুর আড়াই হাজার বছর পরেও আজও স্কুলে কলেজে যে জ্যামিতি শাস্ত্র পড়ানো হয়, তারও মূল ভিত্তিক ইউক্লিডেরই তত্ত্ব।

যদিও অঙ্ক শাস্ত্রের এই প্রয়োজনীয় অংশটিকে আজও আমরা ধরে রেখেছি, কিন্তু যিনি এর স্রষ্টা তার জীবন বৃত্তান্ত হারিয়ে গিয়েছে কালের অন্তরালে। প্রচলিত আছে, ইউক্লিড মহাজ্ঞানী প্লেটোর স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। সেকালে এই স্কুল ছিল খুবই বিখ্যাত, বিশেষ করে এই স্কুলে অংক শাস্ত্র শিক্ষার বিষয়টি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে রাজনৈতিক কারণে প্লেটোর এই অঙ্কশশিক্ষার স্কুলটিকে স্থানান্তরিত করা হয় মিশরের প্রাচীন সমুদ্র বন্দর ও রাজধানী আলেকজান্দ্রিয়ায়। এই সময় আলেকজেন্দ্রিয়ার সম্রাট ছিলেন টলেমি। টলেমি নিজেও ছিলেন একজন জ্ঞানী ব্যক্তি। তিনি কবি, শিল্পী, জ্যোতির্বিদ এবং অঙ্কশাস্ত্রবিদদেরকে খুব শ্রদ্ধা এবং সমাদর করতেন।

তিনিই আলেকজান্দ্রিয়ায় স্থাপন করেছিলেন বিশাল এক গ্রন্থগার। কথিত আছে, সম্রাট টলেমি স্থাপিত এই গ্রন্থকারে প্রায় ৭ লক্ষ গ্রন্থ ছিল। এই ছিল সত্যি এক বিস্ময়কর সংগ্রহ যা আজকের যুগেও এক দুঃসাধ্য কর্ম। কিন্তু আলেকজান্দ্রিয়ার সেই বিশাল ও বিস্ময়কর গ্রন্থগারটি আজ কালের গ্রাসে ধ্বংস হয়ে গেছে।

ইউক্লিড নিজেও এ বিশাল গ্রন্থকারে পড়াশোনা করতেন, গবেষণা করতেন। সারা মিশরে, এমনকি ইউরোপেও ছিল তার পান্ডিত্যের সুনাম। সবাই জানতো তার অংক শাস্ত্রের উপর গবেষণার কথা।
সেই সময় তার অংক শাস্ত্রের গ্রন্থগুলো প্রথমে আরবি ভাষায়ই রচিত হয়েছিল।

পরে দ্বাদশ শতাব্দীতে তার গ্রন্থসমূহ ল্যাটিন বাসায় অনুদিত হয়। ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদের সময় নামকরণ করা হয় ইলিমেন্টস। এতে ছিল মোট ১৩টি খণ্ড। এর প্রথম খন্ডে আছে বিন্দু, রেখা, বৃত্ত, ত্রিভুজ ইত্যাদি। তখনো তো কাগজ আবিষ্কৃত হয়নি। সমস্ত পুস্তকই ছিল হস্ত লিখিত।

আর এই গ্রন্থ লেখা হতো মিশরের প্যাপিরাস নামক গাছের পাতায়। তাই গাছের পাতা হস্ত লিখিত ৭ লক্ষ গ্রন্থের সমাবেশ যে কি বিস্ময়কর ছিল, তা আজ ভাবাও যায় না। দ্বিতীয় খন্ডে আছে বীজগণিতের সাহায্যে জ্যামিতিক অংকের সংখ্যা তৈরির পদ্ধতি। তৃতীয় এবং চতুর্থ খন্ডে আছে বৃত্ত বিষয়ক বিভিন্ন জটিল সমস্যা সমাধান।

পঞ্চম ও ষষ্ঠ খন্ডে আছে অনুপাত, ভগ্নাংশ এবং তাদের বাস্তব পরীক্ষা। একাদশ, দ্বাদশ এবং ত্রয়োদশ খন্ডে আছে বিশুদ্ধ জ্যামিতির সমস্যা ও তার সমাধান। এই বইতে আছে ঘনফল, পিরামিড, অষ্টভুজের ক্ষেত্রফল এবং যৌগিক বিষয়ে আলোচনা। ইউক্লিড শুধু এগুলো সংগ্রহ এবং সম্পাদনাই করেননি, সেখানে নিজস্ব মত ও তত্ত্বও সংযোজন করেছেন।

তৈরি করেছেন তার নিজস্ব গাণিতিক পদ্ধতি। এগুলোর বিশেষত্ব এই যে, এখানে সেই আদি যুগ থেকে শুরু করে ইউক্লিডের যুগ পর্যন্ত জ্যামিতি শাস্ত্রের একটি সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যায়। কোন কোন পণ্ডিত মনে করতেন এই জ্যামিতি গ্রন্থ সংকলন সম্পাদনা করার জন্য মহাজ্ঞানী এরিস্টটল তাকে নির্দেশ এবং অনুপ্রেরণা দান করেছিলেন।

তার আদেশেই ইউক্লিড এই জটিল কাজে হাত দেন এবং তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেন। কিন্তু আধুনিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, কারো আদেশ নয়, তার নিজের মনের অনুপ্রেরণাতেই বেছে নিয়েছিলেন এই বিশাল কর্মটি। আজ এই গ্রন্থ বহু ভাষায় অনূদিত হয়ে প্রচারিত হয়েছে বিশ্বের প্রতিটি দেশে।

পরবর্তীকালে বিশ্বের জ্ঞানী এবং পন্ডিত ব্যক্তিরাও জ্যামিতির সূত্র অবলম্বনে তাদের গবেষণা করেছেন আবিষ্কার করেছেন অনেক বড় বড় বৈজ্ঞানিক সূত্র। ইউক্লিডের উপর গবেষণা করতে করতেই বিখ্যাত জার্মান অংক শাস্ত্রবিদ রেইম্যান আবিষ্কার করেন ইউক্লিডিয়ান জিওমেট্রি।

মহাজ্ঞানী আইনস্টাইনও ইউক্লিডের জ্যামিতির সূত্রের সাহায্যে আবিষ্কার করেছেন তার আপেক্ষিক তত্ত্ব। এছাড়াও আইনস্টাইন ছিলেন ইউক্লিডের একান্ত ভক্ত এবং তার ভাবশিষ্য। তিনি ইউক্লিডের উপর অনেক প্রবন্ধ রচনা করেছেন এবং গবেষণাও করেছেন। মহাজ্ঞানী আইনস্টাইন এর মতে ইউক্লিড ছিলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অঙ্ক শাস্ত্রবিদ।

তিনিই জ্যামিতিশাস্ত্রের সত্যিকারের সূত্র আবিষ্কার করে গেছেন। ইউক্লিডের জ্যামিতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো কতগুলো ব্যবহার বিনা প্রমাণে মেনে নিতে হবে। তাদের বলা হয় স্বতঃসিদ্ধ। অর্থাৎ এগুলো ধ্রুব সত্য। অংক দিয়ে এর কোন প্রমাণ দেওয়া যাবে না, অর্থাৎ বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা মেলে না।

যেমনঃ ইউক্লিডের একটি সিদ্ধান্ত হল কোন একটি সরল রেখার বহিঃস্থ কোনো বিন্দু থেকে একটিমাত্র সমান্তরাল সরলরেখা আঁকা যেতে পারে। ইউক্লিড বলেন, Z বিন্দুর ভেতর দিয়ে XY সরলরেখার সমান্তরাল একটি মাত্রই সরলরেখা আঁকা যায়। ইউক্লিড নিজেই এ ব্যাপারটির একটি যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ খাড়া করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু পারেননি।



যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। বিভিন্ন শ্রেনির সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। নতুন নতুন সব শিক্ষামূলক ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন।

বি: দ্র: তোমার নিজের রচিত কবিতা, সাহিত্য বা যেকোনো শিক্ষামূলক লেখা পাঠিয়ে দাও এডুয়েটিক’র কাছে। এডুয়েটিক প্রকাশ করবে তোমার প্রিয় লেখাটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *