জীবনী: ওয়াল্ট ডিজনি টেলিভিশনের একটি মজার এবং আকর্ষণীয় প্রোগ্রাম হলো কার্টুন ছবি। বিশেষ করে ছেলেমেয়েদের কাছেই সবচেয়ে মজার বিষয় এটি। এর বিশেষত্ব হলো এতে কোন জীবন্ত মানুষ বা প্রাণীর ছবি থাকে না। শুধু হাতে আঁকা ছবি জোড়া দিয়ে দিয়ে সাজানো হয় গোটা গল্পটাকে।
ছবিগুলো স্বাভাবিক এবং আকৃতিও থাকে না। বিকৃত করে কার্টুনের আকারে থাকে ছবিগুলো। এতেই গোটা বিষয়টি আরো কৌতুকের এবং মজার হয়ে ওঠে। এই যে কার্টুন ছবি এঁকে এঁকে চলচ্চিত্র তৈরি করা এই পদ্ধতিটি যিনি আদি উদ্ভাবক তিনি হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্রকার ও টেলিভিশনের প্রোগ্রাম প্রডিউসার ওয়াল্ট ডিজনি।
তার তৈরি কার্টুন ছবি মিকি মাউস, সিলি সিমফনি কিংবা ডোনাল্ড ডাক দেখেনি শিক্ষিত সমাজে এমন ছেলে মেয়ের সংখ্যা খুব কম। তিনি শুধু শিশু কিশোরদের জন্য ছবি তৈরি করেননি, আরো একটি বিস্ময়কর কান্ড করে গেছেন। তৈরি করেছেন বিস্ময়কর একটি জগত। দুটো মজার শিশু পার্ক।
একটি যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলস শহরের কাছে এবং অপরটি ফ্লোরিডা রাজ্যে। এই শিশু পার্ক দুটোর নাম হল ডিজনিল্যন্ড। এই ডিজনিল্যান্ডের কথাও আজ সারা বিশ্বের ছেলেবুড়ো সকলেই জানে আসলে ওয়াল্ড ডিজনি আজ এই শিশু পার্ক দুটোর জন্যই বেশি পরিচিত। ডিজনির নিজের নামেই পার্ক দুটোর নামকরণ করা হয়েছে। ডিজনির নিজের দেশ তাই নাম ডিজনিল্যান্ড।
এই বিস্ময়কর প্রতিভারধর ওয়াল্ট ডিজনির জন্ম হয়েছিল ১৯০১ সালের ৫ ডিসেম্বর তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের চিকাগো শহরে। তিনি ছিলেন পিতামাতার চতুর্থ সন্তান। পিতা এলিয়াস ডিজনি ছিলেন চিকাগোর একজন দক্ষ কাঠমিস্ত্রি এবং গৃহনির্মাতা। মা ফ্লোরা কল ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা।
ওয়াল্টের জন্মের অল্প কিছুদিন পরেই তার বাবা-মা চিকাগো থেকে চলে এলেন মিসৌরি রাজ্যের মার্সেলিন নামে একটি শহরে। এখানে এসেই এই শিক্ষাজীবন শুরু হয় ওয়াল্টের। লেখাপড়ার পাশাপাশি চলতে থাকে তার ছবি আঁকার কাজও। ছবি আঁকাটা ছিল তার জন্মগত প্রতিভা।
তাকে ছবি আঁকার জন্য কোন অনুপ্রেরণা দিতে হয়নি বলতেও হয়নি। ছবি আঁকার অভ্যাস তাকে পেয়ে বসেছিল অক্ষরজ্ঞানের সময় থেকেই আপনা থেকেই। যদিও ব্যাপারটি তখনি কারো নজরে আসেনি। কিন্তু এমনি করেই সবার অলক্ষে সেদিন জন্ম হয়েছিল ভবিষ্যতের এক বিশাল প্রতিভার।
এর কিছুদিন পরে এলিয়াস ডিজনি আবার তার বাসস্থান বদল করলেন। তিনি সবাইকে নিয়ে আবার চলে এলেন ক্যানসাস শহরে। এখানে এসে এক মজার কান্ড হয়। তার বাবা বাসায় একটি দৈনিক খবরের কাগজ রাখতেন। কিন্তু কাগজটি তাদের বাসায় আসতো না। পাশের গলির দোকান থেকে প্রত্যেকদিন সকালে সংগ্রহ করে আনতে হত। এই দায়িত্বটি পড়েছিল কিশোর বালক ওয়াল্টর উপর।
প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠেই তিনি ছুটতেন দৈনিক খবরের কাগজ আনতে। এটা ছিল তার ঘড়ি ধরা কাজ। এই ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি পরবর্তী সময় বলেছিলেন, এই যে দায়িত্ববোধ বাল্যকালে আমার উপর চাপানো হয়েছিল, সেই দায়িত্ব আমি যথাযথভাবে পালন করেছি, পরবর্তীকালেও এই দায়িত্ববোধটাই আমাকে এতদূর আসতে সাহায্য করেছে।
দায়িত্বকে আমি জীবনে কখনো অবহেলা করিনি। এটা ছিল আমার আবাল্য শিক্ষা। আগেই বলেছি, স্কুলে পড়ার সাথে সাথেই তার শখের ছবি আঁকার কাজও চলত। শেষে তিনি এই ছবি আঁকার দিকেই বেশি করে ঝুঁকে পড়লেন। স্কুলের পড়া শেষ হওয়ার আগেই তিনি ক্যানসাস শহরে একই স্থানে দুটি ছবি আঁকার স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলেন।
এর একটি হলো স্টাডি অব কার্টুনিং করেসপনডেন্স স্কুল এবং অপরটি হল ক্যানসাস সিটি আর্ট ইনস্টিটিউট এন্ড স্কুল অব ডিজাইন। ১৯১৭ সালের দিকে ওয়াল্ট একাই আবার চিকাগোতে ফিরে এলেন এবং একটি ফটোগ্রাফি শিক্ষার স্কুলে ভর্তি হলেন। তবে এখানে শুধু ক্যামেরায় ছবি তোলার কাজই নয়, কাগজে ছবি আঁকা শেখানো হতো।
- আরো পড়ুন: জীবনী: পিথাগোরাস
- আরো পড়ুন: বাংলা ফন্ট ইনস্টল করার উপায়
- আরো পড়ুন: জীবনানন্দ দাশ – MCQ Questions
এই স্কুলে পড়ার সময়ই ডিজনি চিকাগোর একটি দৈনিক পত্রিকায় কার্টুনিস্টের চাকরি পেয়ে গেলেন।
কিন্তু এই সময়ই তার জীবনে নেমে আসে এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। শুরু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধের সময় একদিন আমেরিকার সেনাবাহিনীর লোকেরা তাকে পত্রিকার অফিস থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং ট্রাক ড্রাইভারের হেল্পার হিসাবে কাজে লাগানো হয়।
জোর করে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় প্রথমে ফ্রান্সে এবং সেখান থেকে জার্মানিতে। তিনি এই বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে আবার ক্যানসাসে ফিরে আসেন ১৯১৯ সালে। এখানে এসে কিছুদিন বেকার জীবন কাটান। পরে স্থানীয় একটি কমার্শিয়াল স্টুডিওতে পার্টটাইম চাকরি পান। তবে এখানেই তার পরবর্তী জীবনের বীজ লুকিয়ে ছিল। তিনি তার সন্ধান লাভ করেন।
এই স্টুডিওতেই উব্ ইয়র্কস নামে এক যুবক ছিলেন। তার সাথে একত্রেই কাজ করতেন। তার সাথেই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে ওয়াল্টের। এই বন্ধুত্ব তাদের আজীবনে ছিল এবং জীবনের অগ্রগতির ক্ষেত্রে একজন ছিলেন আরেকজনের বিশ্বস্ত বন্ধু ও সহকারী। ইয়র্কসের সাথে বন্ধুত্বই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ওয়াল্ট ডিজনির।
এই স্টুডিওতে কাজ করতে করতেই দুই বন্ধু বুঝলেন, এখানে থাকলে কিছু হবে না। উন্নতি করতে হলে এখান থেকে বের হতে হবে। নতুন কিছু চিন্তা করতে হবে। নইলে পচে মরতে হবে। অতঃপর হলোও তাই। দুই বন্ধুর হাতে দু চার পয়সা যা ছিল তাই দিয়ে তারা একটি স্টুডিও বানালেন। কিনলেন একটি সেকেন্ডহ্যান্ড মুভি ক্যামেরা।
তারপর দুই বন্ধুর হাতে আঁকা ছবি দিয়ে তৈরি হলো একটি বিজ্ঞাপনের শট কার্টুন ফিল্ম অর্থাৎ কার্টুন চলচ্চিত্র। একটি অনুষ্ঠানে মাত্র দুমিনিট স্থায়ী এই কার্টুন ছবিটি প্রদর্শনও করা হল। এ ধরনের বিজ্ঞাপন কার্টুন ছবি আজকাল টেলিভিশনে হামেশাই দেখানো হয়। কিন্তু এর আদি উৎস ছিল এই দুই বন্ধুর তৈরি সেই ছবিটি। ছবিটি দারুণ সাড়া জায়গাতে সক্ষম হল।
এমন মজার আর কৌতুকের ছবি আগে আর কেউ দেখেনি। ছবির জনপ্রিয়তায় তাদের উৎসাহ আরো বেড়ে গেলো। এবার ডিজনি তার বন্ধুকে নিয়ে আরো একটি কার্টুন ফিল্ম তৈরি করে ফেললেন নাম দিলেন লাভ ও গ্রামস। এটিও দারুন হৈচৈ ফেলে দিল চারদিকে। কিন্তু এর দুটোই ছিল একেবারেই স্বল্প দৈর্ঘ্য। মাত্র দুই মিনিটের ছবি।
একটি রূপকথার গল্প অবলম্বনে তৈরি হল সিরিজ কার্টুন ছবি। নাম দেওয়া হল ‘অ্যালিস ইন কার্টুনল্যান্ড’।
ছবিটি তৈরির পর নিউ ইয়র্কের একজন ডিস্ট্রিবিউটর ছবিটি কিনেও নিলেন প্রচারও করলেন। কিন্তু তাদের সাথে করলেন বিশ্বাসঘাতকতা। তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করলেন।
এতে ভয়ানক মনঃক্ষুণ্ণ হলেন ডিজনি। তিনি রাগের মাথায় ক্যানসাস ছেড়ে সোজা চলে এলেন তার তার ভাই রয়-এর কাছে। কিন্তু এখানে এসেও বসে থাকতে পারলেন না তিনি। আবার মাথায় ছবি আঁকার পোকা চাপল। তিনি আবার নতুন করে অ্যালিস তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
ডেকে পাঠালেন ক্যানসাসে তার বিশ্বস্ত সহকর্মী ও বন্ধু ইয়র্কসকে। বন্ধুর পত্র পেয়ে ছুটে এলেন ইয়র্কস। তারপর আবার শুরু হলো ছবি আকার পালা। এবার তারা তৈরি করলেন ‘অসোয়াল্ড’ নামে এক খরগোশের কাহিনী। তবে এবার খুব হুশিয়ার হয়ে কাজ করলেন দুজনেই।
আর বিশ্বাস নয় নগদ পয়সায় কাজ করতে হবে। এই ছবির প্রতিটি খন্ড ১৫০০ ডলারের চুক্তিতে বিক্রি করতে লাগলেন। এমনি করে তাদের অনেক পয়সা জমা হল। তারা ব্যবসার সম্প্রসারণ করতে লাগলেন। অবশেষে তাদের ক্ষুদ্র স্টুডিও রূপান্তরিত হল মস্ত বড় একটি কোম্পানিতে। ডিজনিরা এতদিন যেসব ছবি তৈরি করেছিলেন তার সবগুলোই ছিল নির্বাক ছবি।
কারণ তখনো বিশ্বে সবাক ছবির কলকৌশলই আবিষ্কার হয়নি। তারপর ১৯২৭ সালে যখন সবাক চলচ্চিত্র তৈরি হতে লাগলো তখন থেকে ডিজনিদের কার্টুনরাও কথা বলতে শুরু করল। ছবি হতে লাগলো আরো মজার এবং জীবন্ত। আর দ্বিতীয়টি স্থাপন করা হয়েছে ফ্লোরিডা রাজ্যে। এটি উদ্বোধন করা হয় ওয়াল্ট ডিজনির মৃত্যু মুহূর্তে ১৯৬৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে।
- আরো পড়ুন: গর্ভধারণ করার উপায়
- আরো পড়ুন: ছেলেদের বড় স্তনের সমস্যা
- আরো পড়ুন: আঁচিল দূর করার উপায়
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। বিভিন্ন শ্রেনির সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। নতুন নতুন সব শিক্ষামূলক ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন।
বি: দ্র: তোমার নিজের রচিত কবিতা, সাহিত্য বা যেকোনো শিক্ষামূলক লেখা পাঠিয়ে দাও এডুয়েটিক’র কাছে। এডুয়েটিক প্রকাশ করবে তোমার প্রিয় লেখাটি।