জীবনী: টাইকো ব্রাহে

টাইকো ব্রাহে

জীবনী: টাইকো ব্রাহে মহাকাশ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে প্রায় আদিকাল থেকেই। তবে যতই দিন যাচ্ছে এবং বিজ্ঞান কারিগরি জ্ঞানের সম্প্রসারণ ঘটছে ততই এর বিকাশ হচ্ছে। আবিষ্কৃত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র এবং বিস্ময়কর হাজারো মহা জাগতিক বস্তুসমূহ।

এককালে মানুষ মহাকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতো খালি চোখে। কিন্তু টেলিস্কোপ আবিষ্কারের ফলে মহাকাশ গবেষণায় এসেছে বিপ্লব। টেলিস্কোপ আবিষ্কারের আগেও কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বসেছিলেন না। তারাও খালি চোখ দিয়েই আবিষ্কার করেছেন মহাকাশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রহ-নক্ষত্র।

টেলিস্কোপ আবিষ্কারের আগেই যে সকল বিজ্ঞানী মহাকাশ গবেষণায় বিশিষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান ছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহে। টেলিস্কোপ আবিষ্কারের আগে ডেনমার্কীয় বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহের গণনাই ছিল সবচেয়ে নিখুঁত।

তিনিও ছিলেন মূলতঃ কোপারনিকাসের মতবাদে বিশ্বাসী। কোপারনিকাসই সর্বপ্রথম বলেছিলেন যে, সৌরজগতের কেন্দ্রবিন্দু পৃথিবী নয়-সূর্য। টাইকো ব্রাহেও একই মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন এবং এদের মতবাদের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী সময়ে সপ্তাদশ শতাব্দীতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের নববিকাশ ঘটেছিল।

অর্থাৎ টাইকো ব্রাহের কাজই ছিল আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি। জ্যোতির্বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহের জন্ম হয়েছিল ১৫৪৬ সালের ১৪ই ডিসেম্বর ডেনমার্কের স্কেনিয়া প্রদেশের নূদস্ট্রোপ শহরে। তার পিতা ছিলেন প্রিভি কাউন্সিলার এবং পরবর্তী সময়ে হ্যালসিংবোর্গের গভর্নর নিযুক্ত হয়েছিলেন।

ব্রাহের পিতার প্রধান কাজ ছিল বালটিক সাগরের নৌপথ নিয়ন্ত্রণ করা। তবে ব্রাহের পিতার চেয়ে তার কাকা ছিলেন আরো ধনী ব্যক্তি এবং নিঃসন্তান। তাই নিঃসন্তান কাকাই তার ভাইপোর দেখাশোনা করতেন। ভাইপোর যাবতীয় পড়ার খরচও তিনিই চালাতেন।

তবে শুধু যে তার টাকা ছিল বলেই তিনি ভাইপোর দেখাশোনা করতেন তা নয়, আসলে ব্রাহের পিতা শিক্ষিত এবং সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মচারী হলে কি হবে, তিনি তেমন ভালো লোক ছিলেন না। তার নিজের সন্তানকেও ভালো চোখে দেখতেন না। তাই টাইকো ব্রাহেকে বাল্যকালেই জীবনের তাগিদে কাকার আশ্রয় যেতে হয়েছিল।

কাকার আর্থিক সহযোগিতাতেই তিনি স্কেলিয়ার টোস্ট্রাপ শহরে পড়াশোনা করেন। পরে ১৫৫৯ সালে আইন শাস্ত্র পড়ার জন্য ভর্তি হন কোপেহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ বিভাগে এবং ১৫৬২ সালে আইন পাশও করেন। কিন্তু আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করে এসেও বারে যোগ দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হলো ন।



কয়েকটি প্রাকৃতিক ঘটনা তাকে আইন ব্যবসা থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিকে টেনে নিয়ে এল। প্রথম ঘটনা ঘটে তিনি যখন কোপোনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশাস্ত্র পড়ছিলেন তখন। এই সময়ই ১৫৬০ সালে ২১ আগস্ট কোপেনহেগেনে ঘটে এক বিস্ময়কর ঘটনা। হয় দীর্ঘস্থায়ী পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ।

এই সময় কয়েক মিনিটের জন্য দুপুরবেলা সূর্য আকাশ থেকে হয়ে যায় অদৃশ্য। দিনের বেলা কিছুক্ষণের জন্য নেমে আসে রাতের অন্ধকার। এখানেই অবাক হয়ে গেল ১৪ বছরের কিশোর টাইকো ব্রাহে। কেমন করে সূর্যের মতো একটি বিশাল বস্তু সহসা দিনের বেলায় অদৃশ্য হয়ে যায় এবং কেমন করে তা আবার প্রকাশ পেলো।

এটাই ছিল তার কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার। তার মনে হল মহাকাশের এই বিস্ময়কর রহস্যটা তাকে অনুসন্ধান করে দেখতে হবে। কেমন করে ঘটে এই অলৌকিক ঘটনা। তাই এই ঘটনার কথা তিনি ভুলতে পারলেন না। শুধু ঘটনা নয, এরপর থেকেই তার জীবনের ধারাও পাল্টে যায়। তিনি প্রচন্ডভাবে ঝুঁকে পড়েন জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিকে।

তার ছাত্রজীবন তখন থেকেই দু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তিনি দিনে বিশ্ববিদ্যালয় পড়তেন আইনশাস্ত্র, আর রাতের বেলা হোস্টেলের ছাদে উঠে তাকিয়ে থাকতেন তারকাখচিত আকাশের দিকে। আকাশের ঘন কালো বুকে জ্বলজ্বল করে লেগে থাকা হাজার হাজার তারকা তার কাছে বিস্ময়ের সৃষ্টি করতো।

তিনি অবাক বিস্ময় তাকিয়ে থাকতেন রাতের আকাশের দিকে। এই জ্যোতির্বিজ্ঞানচর্চায় তাকে উৎসাহ যোগাতেন ভার্সিটিরই জৈনক অংকের অধ্যাপক। তখনকার দিনে জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর তেমন উল্লেখযোগ্য কোন বই ছিল না। তখন একমাত্র যে বইটি পাওয়া যেত সেটা ছিল টলেমির আলম্যাগেস্ট।

এই গ্রন্থেই মহাকাশের অনেক গ্রহণ নক্ষত্র বিষয়ে আলোচনা ছিল। কিশোর বালক ব্রাহে এই গ্রন্থ থেকে অংক স্যারের সহযোগিতায় মহাকাশ সম্পর্কে ধারণা সংগ্রহ করতেন। আর এমনি করেই কিশোর বয়সেই টাইকো ব্রাহে আকাশের তারা চিহ্নিত করতে এবং গুনতে শিখেন।

১৫৬২ সাল থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি ভর্তি হন লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে তিনি ১৫৬৫ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এই লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ব্রাহের জীবনে ঘটে আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এটি ছিল ১৫৬৩ সালের ঘটনা।

এই সময় তিনি আকাশে দেখতে পান সৌরজগতের বৃহত্তম দুটি গ্রহ বৃহস্পতি ও শনি দুটোই একই লাইনে বসেছে এবং তাদের সম্মিলিত আলো অনেক উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। তিনি ভাবতে থাকেন কেমন করে গ্রহগুলো তাদের আপন গতিপথে পরিভ্রমণ করে এবং বিস্ময়কর ঘটনা ঘটায়। এতেও জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে ব্রাহের আগ্রহ আরো বেড়ে যায়।



যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। বিভিন্ন শ্রেনির সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। নতুন নতুন সব শিক্ষামূলক ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন।

বি: দ্র: তোমার নিজের রচিত কবিতা, সাহিত্য বা যেকোনো শিক্ষামূলক লেখা পাঠিয়ে দাও এডুয়েটিক’র কাছে। এডুয়েটিক প্রকাশ করবে তোমার প্রিয় লেখাটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *