জীবনী: রুডলফ ডিজেল বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন জেমস ওয়াট। এটা হল বাইরের জ্বালানি পুড়িয়ে ইঞ্জিনের চাকা ঘুরাতে হয়। এটি ছিল পুরানো মডেল। কিন্তু আধুনিক মডেলের ইঞ্জিনের অন্তর্দহন পদ্ধতির বা প্রেশার ইগনাইড হিট ইঞ্জিন নামে ইঞ্জিন যিনি আবিষ্কার করেন তিনিই হলেন বিজ্ঞানী রুডলফ ডিজেল।
তার নামানুসারে এই আধুনিক মডেলের নাম ডিজেল ইঞ্জিন। আজ পৃথিবীর সর্বত্র যে কোটি কোটি মোটরকারে আধুনিক ইঞ্জিন ব্যবহৃত হচ্ছে তার সবই ডিজেল ইঞ্জিন। রুডলফ ডিজেল ছিলেন একজন খ্যাতনামা তাপ প্রকৌশলী। তার আরো গুণ ছিল। তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ সমাজবিজ্ঞানীও।
পেশায় তিনি প্রকৌশলবিজ্ঞানী, কিন্তু ব্যক্তি জীবনে ছিলেন একজন সেরা মানবদরদী। সমাজসেবাকে যিনি ‘শান্তির জন্য ক্রুসেড’ বলে অভিহিত করতেন। এই ক্রুসেডেই তিনি শান্তির জন্য যুদ্ধ করে গেছেন জীবনভর।
একজন প্রকৌশলী হিসেবে তার চিন্তা ছিল যদি এমন এক ধরনের ইঞ্জিন আবিষ্কার করা যায় যার আকার হবে ছোট, যেকোনো মোটরকারে লাগানো যাবে, অনায়াসে ব্যবহারযোগ্য হবে, দামে কম থাকবে এবং জ্বালানি পাওয়া হবে সহজ।
এই চিন্তাকে বাস্তবে রূপদান করতে গিয়েই ডিজেল সাহেব আবিষ্কার করে ফেললেন তার নতুন ডিজাইনের ইঞ্জিন, যার আজ বিশ্বব্যাপী বহু ব্যবহার ডিজেল ইঞ্জিন। ডিজেলের আগে যেসব মোটর ইঞ্জিন ছিল তা ছিল বাষ্পীয় ইঞ্জিন। সেগুলোর আকারও ছিল বড়, ছিল ব্যয়বহুল এবং এতে জ্বালানির অপচয় হতো প্রচুর।
তার নিজের আবিষ্কৃত ইঞ্জিন সম্পর্কে তিনি রসিকতা করে বলেছেন, ‘আগের ইঞ্জিনগুলো ছিল কুরেঘরের সমান বড় আর আমার ইঞ্জিন হলো টুপির মত ছোট।’ ডিজেল ইঞ্জিল দিয়ে যে শুধু মোটরকার চলে তাই নায়, এই ইঞ্জিন চাকা ঘোড়ায় স্বর্ণকারের কারখানায়, দন্ত চিকিৎসকের ক্লিনিকে, জুতো তৈরির কারখানায়, খেলনা তৈরির দোকানে প্রায় সর্বত্র।
আজ এই ডিজেল ইঞ্জিন পৃথিবীর সর্বত্র নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে একজন যান্ত্রিক ক্রীতদাস হিসেবে। বিশ্বখ্যাত ডিজেল ইঞ্জিনের আবিষ্কর্তা রুডলফ ডিজেলের জন্ম হয়েছিল ১৮৫৮ সালের ১৮ মার্চ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। তার পিতা থিওডোর ডিজেল ছিলেন একজন কর্মকার বা কামার।
তার ছিল এক মস্ত বড় জুতো তৈরির কারখানা। মা ইলিস স্ট্রোবেল ডিজেল ছিলেন জার্মান বংশোদ্ভূত ধাত্রীমাতা এবং গৃহশিক্ষিকা। পরে একজন যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশের দক্ষ ডিজাইনার হিসেবে সুইজারল্যান্ডে এসে চাকরি নেন সুলজার মেশিন ওয়ার্কস কোম্পানিতে। এই সময় সুইজারল্যান্ড ছিল বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় স্টীম ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক দেশ তিনি সুইজারল্যান্ডে দুই বছর ছিলেন।
- আরো পড়ুন: জীবনী: কার্ল হাইজেনবার্গ
- আরো পড়ুন: সুবহানাল্লাহ কখন ও কেন বলবেন?
- আরো পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – MCQ Questions
এর আগে তার বাবার জুতো তৈরি কারখানা ছিল। যুদ্ধের সময় তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এবার রুডলফ নিজেই বাবাকে আর্থিক সহযোগিতা দিলেন। থিওডোর সাহেব তার পরিত্যক্ত ব্যবসা আবার চালু করলেন।
২৫ বছর বয়সের রুডলফ মার্থা ফ্র্যাচ নামে এক জার্মান বংশভূত মেয়েকে বিয়ে করেন।
মার্থার সাথে তার প্রথম দেখা হয়েছিল তার বন্ধু এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী আরনেস্ট ব্যান্ডেসের বাড়িতে। সেখান থেকেই পরিচয়, প্রেম এবং পরে বিয়ে। বিয়ের পরের বছর ১৮৮৪ সালে মার্থার গর্ভে রুডলফের এক পুত্র সন্তান হয়। এর দু বছর পরে আরেক মেয়ে হয়। রুডলফের ছেলে পরবর্তীকালে হয়েছিলেন বিখ্যাত স্থাপত্যশিল্পী এবং ধর্মগুরু।
মেয়ে হয়েছিলেন দর্শনের অধ্যাপক। ১৮৮৫ সালে তিনি প্যারিসে একটি কারখানা স্থাপন করেন এবং তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করে তৈরি করতে থাকেন মোটরকার ইঞ্জিন। তার কারখানা থেকে যে ইঞ্জিন তৈরি হল তার নাম দিলেন ব্ল্যাক মিস্ট্রেস। এগুলো ছিল স্টীম ইঞ্জিন।
এরপর ১৮৮৮ সালে তিনি অ্যামোনিয়া গ্যাসকে ইঞ্জিনে জ্বালানি হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করার সময় এক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছিলেন। অবশ্য এতে তার অন্য একটি লাভও হয়েছিল। তিনি এই অ্যামোনিয়া গ্যাসকে কাচেঁর শিশিতে ভরে এমন এক ধরনের বোমাজাতীয় অস্ত্র তৈরি করলেন যা লেথাল বোমা এবং বুলেটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
এটাও তার এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। তিনি এই বোমা তৈরির কথা জানালেন ফ্রান্সের যুদ্ধ-মন্ত্রণালয়কে। প্রস্তাব দিলেন যে, মন্ত্রণালয় চাইলে তিনি এ ধরনের অস্ত্র তৈরি করে সরবরাহ করতে পারেন। কিন্তু ফ্রান্সের পেটেন্ট অফিস থেকে এ ধরনের অস্ত্র তৈরীর তিনি কোন অনুমোদন কিংবা পেটেন্টে পেলেন না, তখন তিনি একই প্রস্তাব দিলেন জার্মানির কাছে।
জার্মানি অবশ্য তার প্রস্তাব গ্রহণ করলো, তবে সরাসরি নয়। তিনি নিজে তৈরি করার অনুমোদন পেলেন না। জার্মানির এক কোম্পানিতে তৈরি হবে এই বোমা তার তত্ত্বাবধানে, তিনি রয়্যালিটি পাবেন। এই শর্তেই তিনি সাময়িকভাবে জার্মানির লিন্ডে এন্টারপ্রাইজেস-এ চাকরি নিলেন বার্লিনে এসে।
এখানে তিনি ১৮৯২ সালে এসে এই অস্ত্রের আরো উন্নতিবিধানের কৃতিত্বের জন্য জার্মানির পেটেন্ট অনুমোদন পেয়ে যান। ১৯১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তিনি লন্ডন সফর করতে আসেন। এই সময় ইংলিশ চ্যানেল পার হওয়ার সময়েই তিনি ফেরি থেকে রাতের অন্ধকার পড়ে যান সাগরে। তারপর আর তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার লাশও পাওয়া যায়নি।
- আরো পড়ুন: সাইনাসের ব্যথা দূর করার উপায়
- আরো পড়ুন: পুরুষের শুক্রাণু বাড়ে যেসব খাবারে
- আরো পড়ুন: শিশুর মুখের র্যাশ দূর করার উপায়
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। বিভিন্ন শ্রেনির সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। নতুন নতুন সব শিক্ষামূলক ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন।
বি: দ্র: তোমার নিজের রচিত কবিতা, সাহিত্য বা যেকোনো শিক্ষামূলক লেখা পাঠিয়ে দাও এডুয়েটিক’র কাছে। এডুয়েটিক প্রকাশ করবে তোমার প্রিয় লেখাটি।