আমরা অনেকেই জানি গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কেমন হবে। এই সময় গর্ভবতী মাকে কোন কোন খাওয়াতে হবে? এবং কোন কোন খাবার থেকে মাকে বিরত রাখতে হবে? তাই আজকে আমরা এডুয়েটিকের নারী স্বাস্থ্য বিভাগে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
- আরো পড়ুন: গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
- আরো পড়ুন: যে ৮ কারণে চুল পড়ে
- আরো পড়ুন: বড় স্তনের সমস্যা
এই পৃথিবীতে প্রতিটি শিশুর জন্য মা হলো বটবৃক্ষের মতো। মায়ের অফুরন্ত স্নেহ, ভালোবাসায় শিশুরা নিরাপদ ও নির্ভাবনায় বেড়ে ওঠে। তাই সবার আগে আমাদের প্রসূতি মায়ের পুষ্টির দিকটি লক্ষ রাখতে হবে।
সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান জন্মদানের প্রধান শর্ত গর্ভবতী মায়ের যথাযথ পরিচর্যা। গর্ভকালীন প্রথম ৩ মাস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময় প্রসূতি নারীর খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, অনেক ক্ষেত্রে ওজন কমে যাওয়া ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। তাই পরিবারের সদস্যদের হবু মায়ের সুস্বাস্থ্য এবং সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে ৫ মাস থেকে ভ্রূণের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য মায়ের খাবারটা হওয়া চাই সুষম। সাথে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং পর্যাপ্ত পানি যাতে থাকে। সেই সাথে পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।
যেমন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও পুষ্টি বোর্ড গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভের শেষের ২ মাস তাদের দরকারী আমিষের চাহিদার সাথে অতিরিক্ত ২০ গ্রাম আমিষ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। এ সব আমিষ উৎকৃষ্ট অর্থাৎ প্রাণীজ হওয়া বাঞ্ছনীয়। পাশাপাশি খাবারে যাতে ৫’শ মিলিগ্রাম অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ও ৫ মিলিগ্রাম লোহাও থাকে। ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত দুধ ও বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
এ ছাড়া ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’– এর অভাবে এ সময় অস্টিওম্যালেসিয়াম নামের অস্থি বা হাড়ের রোগ দেখা দেয়। এ ছাড়া এ সময় আয়োডিনযুক্ত খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ গর্ভবতী মায়ের খাদ্যে থাকা উচিত। কারণ আয়োডিন শিশুর বুদ্ধি বা মস্তিষ্কের বর্ধনের জন্য জরুরি। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে যেখানে গর্ভস্থ শিশুর ওজন প্রতিদিন বড়জোর ১ গ্রাম করে বৃদ্ধি পায়, সেখানে ৫ মাসের পর থেকে প্রতিদিন ১০ গ্রাম করে ওজন বাড়তে শুরু করে। গর্ভাবস্থার শেষ ২ মাস শিশুর মোট ওজনের অর্ধেক বৃদ্ধি পায়। সে জন্য মায়ের পুষ্টির দিকটা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা:
সকালের খাবার: সকাল ৮ টা থেকে সাড়ে ৮ টার মধ্যে রুটি ৪ টি অথবা পরোটা ২ টি, ১ টি ডিম ও ২ কাপ সবজি। ১১ টা থেকে সাড়ে ১১ টার মধ্যে ২৫০ মিলিগ্রাম দুধ অথবা বাদাম ৬০ গ্রাম, বিস্কুট ২ টি অথবা মুড়ি, যেকোনো ১ টি মৌসুিম ফল।
দুপুরের খাবার: ভাত ৩ কাপ (মাঝারি চায়ের কাপে), মাছ বা মাংস ২ টুকরো, মাসে ৪ দিন সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজি, সালাদ ও লেবু, ডাল ১ কাপ।
বিকালের খাবার: বিকেল ৫ টা থেকে ৬ টার মধ্যে দুধ ২৫০ মিলিগ্রাম বা স্যুপ অথবা ৬০ গ্রাম বাদাম, বিস্কুট অথবা মুড়ি ৩০ গ্রাম অথবা নুডলস ১ কাপ।
রাতের খাবার: ভাত ৪ কাপ, মাছ বা মাংস অন্তত ২ টুকরো, মাসে ৪ দিন সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজি এবং ১ কাপ ডাল।
- আরো পড়ুন: কনডম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
- আরো পড়ুন: নবজাতকের ৫টি বিপদচিহ্ন ও করণীয়
- আরো পড়ুন: রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
খাদ্য সম্বন্ধে কিছু প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা: বাড়ির অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ রয়েছেন যিনি হবু মাকে বাড়তি খাবার খেতে নিষেধ করেন। তাঁদের ধারণা বাড়তি খাবার খেলে পেটের সন্তান বড় হয়ে যাবে। আর বড় হয়ে গেলে সিজার করতে হবে। ফলে মা অপুষ্টিতে ভোগেন এবং শিশু কম ওজন নিয়ে অপরিণত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়। এটা একেবারেই ঠিক নয়। এ ছাড়া মাকে কিছু পুষ্টিকর খাবারের বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণা দেয়া হয়।
যেমন মৃগেল মাছ খেলে সন্তানের মৃগী রোগ হয়। বোয়াল মাছ খেলে সন্তানের চোয়াল অনেক বড় হয়। শিং বা শোল মাছ খেলে সন্তানের দেহ সর্পাকৃতির হয়। শসাজাতীয় যেকোনো সবজি খেতে দেয়া হয় না, বলা হয়, সন্তানের দেহের চামড়া ফাটা ফাটা হবে। কলা খেলে ঠান্ডা লাগবে।চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণের সময়সারা দিন মাকে না খাইয়ে রাখা হয়। ইত্যাদি অগণিত ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, যা শুধু ভ্রান্তই। তা হবু মায়ের অপুষ্টিরও একটি কারণ।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।