রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

১২ টি রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন । আসুন এ সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করে জেনে নেওয়া যাক। রসুন আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই রসুনে আছে থিয়ামিন (ভিটামিন বি১), রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২), নায়াসিন (ভিটামিন বি৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ভিটামিন বি৬, ফোলেট (ভিটামিন বি৯) ও সেলেনিয়াম।



সেলেনিয়াম ক্যানসার প্রতিরোধেও কাজ করে। রসুনের মধ্যে আছে এলিসিন নামে এক জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যা ক্যানসারসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এই এলিসিন নামে যে কম্পাউন্ড রসুনে পাওয়া যায়। তার কারণে, রসুনকে সুপারফুডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটলে জানতে পারবেন, তৎকালীন সময়ে রসুন কিন্তু শুধু বিভিন্ন অসুখ সারানোর জন্যই ব্যবহার হতো। মিসরীয়, ব্যাবিলনীয়, গ্রিক, রোমান ও চৈনিক সভ্যতায় ওষুধ হিসেবে রসুন ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এমনকি সকালে খালি পেটে রসুন চিবানোও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

১২ টি রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

১. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি

রসুনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ একে অনেকটা ওষুধের মতোই তৈরি করেছে, যার দরুন রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। খালি পেটে রসুন খেলে এই উপকার বেশি। বর্তমানে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করতে রসুন খুব জরুরি। তাই প্রতিদিন ২ কোয়া রসুন খেতে পারেন।

২. রক্ত সঞ্চালনক্ষমতা বাড়ায়

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন খেলে রক্ত সঞ্চালনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যার দরুণ রক্ত বাধাগ্রস্ত হয়ে যেসব রোগের সৃষ্টি করে, তা আর হতে পারে না।

৩. পুরুষের যৌনক্ষমতা বাড়াতেও বেশ সহায়ক

পুরুষের যৌনক্ষমতা নানান কারণে কমে যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন খেলে আস্তে আস্তে যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে ২ ধরনের মতামত থাকলেও পুরুষের ক্ষমতার মূল উৎস হচ্ছে রক্তের সাবলীল গতি। রসুনে এই কাজ করে বলেই যৌনক্ষমতার কথা বলা হয়ে থাকে।

৪. হৃৎপিণ্ডের শক্তিবর্ধক

যাঁরা হৃদপিণ্ডের ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে বিব্রত রয়েছেন, মাঝেমধ্যে বুকের বাঁ পাশে ব্যথা অনুভূত হয়, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হয়, তাঁদের জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন পানি দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলতে হবে, এতে করে হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হবে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির কারণে হৃদপিণ্ডের ব্লকগুলো আর বাড়বে না এবং ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারবে না, বুকের ব্যথা কমে যাবে, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হবে না।

৫. উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য অনেক পথ্যের অন্যতম রসুন। শরীরের এলডিএল বেড়ে যাওয়ার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায়, প্রতিদিন ২ কোয়া রসুন সকালে খালি পেটে খেলে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা থাকবে না।

৬. সংক্রমণ প্রতিরোধ

মানুষের শরীরে যেকোনো সময়ে সংক্রমণ ঘটতে পারে। সংক্রামক রোগ এমন একটি অবস্থা, যার কোন পূর্বলক্ষণ থাকে না। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন খেলে শরীর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।



৭. ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধ

ফুসফুসে বিভিন্ন কারণে সংক্রমণ হতে পারে। অ্যালার্জি সমস্যা, ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থেকে ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটতে পারে, যা থেকে মুক্তি পেতে রসুন পিষে রস খেলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে, সাথে হলুদগুঁড়া গরম পানি দিয়ে চায়ের মতো খেলে সংক্রমণ থাকে না। আর প্রতিদিন ২ কোয়া রসুন খালি পেটে খাওয়া ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে অত্যন্ত কার্যকর।

৮. রক্ত পরিশোধিত করে

প্রতিদিন ২ কোয়া রসুন খালি পেটে খেলে রক্তের পরিশোধনক্ষমতা বেড়ে গিয়ে রক্ত চলাচলে স্বাভাবিক গতি ফিরে আসে, তাতে শরীর ভালো থাকে, নিরোগ দেহের জন্য সাবলীল রক্ত চলাচল অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়।

৯. ত্বক ভালো রাখে

প্রতিদিন ২ কোয়া রসুন খালি পেটে খেলে ত্বক ভালো থাকে, ত্বকে বার্ধ্যকের ছাপ পড়ে না, চেহারায় কোন দাগ থাকলে কমে যায়।

১০. শরীরে অবাঞ্ছিত ফোলা বা গোটা

অনেকের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ফোলা পিণ্ড থাকে, বাড়ে কমে না, ব্যথাও করে না, কিন্তু ফোলাটা মিশেও না, এমন ফোলা বা গোটা শরীর থেকে মুছে ফেলতে প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ কোষ রসুন সকালে খালি পেটে এবং দুপুর ও রাতে খাবার পর ২ টি করে রসুন কোষ খেলে ফোলাটা আস্তে আস্তে মিশে যাবে। অথবা ২ কোয়া রসুন হালকা করে ভেজে তা খেতে হবে।

১১. সেল ড্যামেজ রোধ করে

রসুনে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ‘সেল ড্যামেজ’ ও ‘এজিং’ রোধ করে। ব্রেনের সেল ড্যামেজ কম হয়ে আলঝেইমারস ও ডিমেনশিয়ার মতো রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

১২. হাড়ের শক্তি বাড়ায়

একটা বয়সের পর বিভিন্ন কারণে নারীদের হাড়ের শক্তি কমে যায়। প্রতিদিন ২ গ্রাম করে রসুন খেলে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রায় ভারসাম্য থাকে, যাঁদের কম থাকে, তাঁদের কিছুটা বাড়ে। ফলে হাড়সংক্রান্ত সমস্যা অনেকটা কমে যায়। এমনকি যে নারীদের মেনোপোজ হয়ে গেছে, তাঁরাও নিয়মিত রসুন খেলে অনেক উপকার পাবেন।

রসুনের বিভিন্ন ডোজ হয়ে থাকে, রান্নায় ও নানা ভর্তায় রসুনের উপস্থিতি থাকে। রসুনের গুণ পেতে সকালে খালি পেটে খাওয়া উত্তম, আমাদের গ্রামবাংলায় রসুন–মুড়ি খাওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে, এতে কিছু উপকার হলেও বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় কিছু ভালো ফল পাওয়া গেলেও সব ঔষধি গুণ পাওয়া যাবে না।



অনেকের ধারণা, অ্যাজমার জন্যও রসুন উপকারী, কিন্তু ব্যাপারটা ভিন্ন, এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিফাঙ্গাল সক্রিয়ভাবে কাজ করে কিন্তু অ্যালার্জিক অ্যাজমা থাকলে রসুন অ্যালার্জি বাড়াতে পারে কারো কারো ক্ষেত্রে। এ ছাড়া অস্ত্রোপচারের পূর্বে বা পরে রসুন এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শই দেন বিশেষজ্ঞরা।

অনেকের রসুনে অ্যালার্জি হয়ে থাকে, আর নিয়মিত এটি খেলে যদি কোনও অসুবিধা বোধ করেন, তখন রসুন না খাওয়াই ভালো, তবে স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এটি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। অনেক ধরনের রসুন বাজারে পাবেন, তার মধ্যে দেশি এককোষী রসুন সবচেয়ে ভালো।

শেষ কথা

আশা করি আমাদের দেওয়া তথ্য রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। যদি এখনো রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা আপনাকে দ্রুত আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া চেষ্টা করবো।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

জিবে ঘা দূর করার উপায়

জিবে ঘা দূর করার উপায়

আজকে আমরা এডুয়েটিকের স্বাস্থ্য বিভাগে আলোচনা করবো জিবে ঘা দূর করার উপায় সম্পর্কে। তাহলে চলুন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *