জীবনী: ফ্রান্সিস বেকন

ফ্রান্সিস বেকন

জীবনী: ফ্রান্সিস বেকন

ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সমূহ এক রকম দার্শনিক চিন্তাধারার মধ্যে আবদ্ধ ছিল। অথচ তারই পাশাপাশি চলছিল কারিগরদের দ্বারা নতুন নতুন যন্ত্রপাতির উদ্ভাবন। কারিগররা অবশ্য বিশেষ কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ধারেপাশে যেতেন না। কেবল প্রয়োজনই তাদের উদ্বুদ্ধ করতো নব নব আবিষ্কারে।

বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যার মধ্যে দূরত্বও ছিল অনেকখানি। পন্ডিতেরা চিন্তা করে দেখলেন, এই দুটির মধ্যে বিভেদ আদৌ নেই। বরং একটি অপরটির পরিপূরক। তখন তারা বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যার মধ্যে সমন্বয় সাধনে যত্নবান হন। অপরদিকে তাদের দেখা দেখি কারিগরাও যন্ত্রপাতি নির্মাণের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে প্রয়োগ করতে প্রয়াসী হন।

ফলে দার্শনিক তত্ত্ব থেকে মুক্তি লাভ করে বিজ্ঞান তার আপন পথটি খুঁজে পায়। এক কথায় তখনই বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আসে একটি বিপ্লব। এই বিপ্লবকে যারা বহন করে এনেছিলেন তাদের মধ্যে ফ্রান্সিস বেকন নিঃসন্দেহে একজন। বেকন ১৫৬১ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে দর্শন ও আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করার পর তিনি অধ্যাপক হিসেবে জীবন শুরু করেন।

অতি অল্প দিনের মধ্যে তার পান্ডিত্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস এর বিচার বিভাগে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান। বেকন অধ্যাপনা বৃত্তি পরিত্যাগ করে বিচার বিভাগের যোগদান করেন এবং অনন্যসাধারণ প্রতিভার জন্য অতি অল্পকালের মধ্যে তিনি উক্ত বিভাগের প্রধানরূপে মনোনীত হন। বেকন ছিলেন মূলতঃ দার্শনিক। তবে বিজ্ঞানের প্রতি ছিল তার আন্তরিক টান।

এত বড় দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠ থাকা সত্ত্বেও তিনি নিয়মিতভাবে বিজ্ঞান ও দর্শনের চর্চা করতেন। পরে কেবলমাত্র বিজ্ঞান সম্বন্ধে ভাবনা-চিন্তা আরম্ভ করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি সংগ্রহ করেন প্রাচীন গ্রিক পন্ডিতদের আমল থেকে বর্তমান পর্যন্ত সমূহ প্রচলিত বৈজ্ঞানিক তথ্যাবলী। তার ফলে বিজ্ঞানের নতুন সম্ভাবনার কথা তার মনে উদিত হয়।



বেকন অতঃপর কারিগরি বিদ্যা ও প্রচলিত যন্ত্রপাতির দিকে আকর্ষণ বোধ করেন। কিছুকাল এ বিষয়ে চিন্তা করার পর তার জন্মে, ঐ বিজ্ঞান এবং কারিগরি বিদ্যাই মানব সভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসের মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করবে। উৎসাহিত বেকন এবং এবার আরম্ভ করেন প্রচন্ড পরিশ্রম। তার চিন্তা ভাবনা গুলি ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশ করেন “দি অ্যাডভনসমেণ্ট অফ লার্নিং” নামক একখানি পুস্তক।

প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যাকে জনপ্রিয় করার এই তার প্রথম প্রয়াস এ এবং সত্য কথা বলতে কি, এই ধরনের প্রয়াস তার পূর্বে কেউ করেন নি। ১৬২০ খ্রিস্টাব্দে বেকন প্রকাশ করেন “গ্রেট ইনস্টরেশন অফ লার্নিং” নামক দ্বিতীয় একখানি মহামূল্য পুস্তক। বিজ্ঞানের ইতিহাসে এই পুস্তক খানির গুরুত্ব অনেকখানি। পুস্কটির প্রথম খন্ডে বেকন প্রচলিত বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলি সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করেন এবং নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন।

এই খন্ডে তিনি উল্লেখ করেন যে, বিজ্ঞানকে অগ্রগতি দান করতে হলো নতুন নতুন তত্ত্ব ও পদ্ধতির উদ্ভাবন করতে হবে এবং প্রাচীন বৈজ্ঞানিক মতামত গুলি সংগ্রহ করতে হবে। পন্ডিত ব্যক্তিরা যাতে এই কাজে এগিয়ে আসেন তার জন্য তিনি অনুরোধ করে রাখেন। পুস্তকখানির দ্বিতীয় খন্ডে তিনি যন্ত্রবিদ্যার উল্লেখ করেন এবং কোন কোন যন্ত্রে কোন কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রযুক্তি হয়েছে তাও ব্যাখ্যা করেন।

তৃতীয় খন্ডে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাচীন বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলিকে প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হন। চতুর্থ খন্ডে কারিগরি জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্ক আলোচনা করেন। পুস্তকখানির আরও কয়েকটি খন্ড তিনি প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সময়ের অভাবে কৃতকার্য হতে পারেন নি। ফ্রান্সিস বেকনের চিন্তাধারা তৎকালীন পন্ডিত সমাজে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার পথ উন্মুক্ত হয়।

প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানরাজ্যে তিনিই প্রথম বিপ্লবের সূচনা করেন। পরে গ্যালিলিও, দেকার্ত প্রভৃতি মহামনীষিদের আপ্রাণ চেষ্টা ও যত্নে বিজ্ঞান তার নিজের পথের সন্ধান লাভ করে। তাই ফ্রান্সিস বেকনের নাম বিজ্ঞান চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করবে। ১৬২৬ খ্রিস্টাব্দে এই মহান চিন্তানায়কের জীবনাবসান হয়।



যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। বিভিন্ন শ্রেনির সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। নতুন নতুন সব শিক্ষামূলক ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন।

বি: দ্র: তোমার নিজের রচিত কবিতা, সাহিত্য বা যেকোনো শিক্ষামূলক লেখা পাঠিয়ে দাও এডুয়েটিক’র কাছে। এডুয়েটিক প্রকাশ করবে তোমার প্রিয় লেখাটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *