জীবনী: আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল

আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল

টেলিফোনের আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল এর নাম বিজ্ঞান জগতে এক উজ্জ্বল জ্যোতি। টেলিফোনে প্রথম ধ্বনি ও প্রথম কথা ছিল “Mr watgon, come here please. I want you.” এই কথাগুলো বলেছিলেন টেলিফোনের আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল আজ তো সর্বত্র গ্রাহামবেল রয়েছে। পৃথিবীর সব যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছে এই গ্রাহামবেলই।

টেলিফোনের মাধ্যমে মানুষ এক দেশ থেকে আরেক দেশে কথা বলছে। ১৮৪৭ সালে ৩রা মার্চ গ্রাহাম বেল জন্মগ্রহণ করেন এডিনবরায়। তিনি জাতিতে স্কট ছিলেন। তার বাবা মেলভিলেবেলও ছিলেন প্রতিভাবান মানুষ। মেলভিলে ফোনেটিক্সে ঠিক বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি এডিনবরা স্কুলে পড়াশোনা করেন ও পরে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজে যান।

তিনি পরে তার বাবার সঙ্গে কানাডায় যান, যেখানে তিনি মুক ও বধিদের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজ করেন। পি, এইচ, ডি ডিগ্রী পান জার্মানির উর্জবাগ থেকে। ছোটবেলায় একটা গল্প তিনি সবাইকেই শোনাতেন। তিনি এডিনবরার এক কারখানায় তার সহপাঠীদের সঙ্গে গিয়েছিলেন। ছেলেগুলোকে কিছু গমের দানা দিয়ে কারখানার অফিসার বললেন এগুলোর খোসা কালকে ছাড়িয়ে আনবি।

বেল বাড়িতে এসে নখ পরিষ্কার করার ব্রাশ দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি খোসা ছাড়িয়ে নিলেন। পরের দিন কারখানার মালিককে এই কথাটা বললেন। মালিক এই কথা শুনে ব্রাশের নীতি অনুসারে এক মেশিন বসালেন। দেখা গেল খুব সহজেই খোসা ছাড়ানো যায়। মুক ও বধিরদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি একটা বিশেষ ধরনের যন্ত্র তৈরি করেন।

যে যন্ত্রটি একই কথা বারবার বলে যাবে। তিনি বধিরদের শিক্ষা দেবার জন্য একটা প্রতিষ্ঠানও স্থাপন করেছিলেন। বধিরদের শ্রবণ শক্তি দান নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই তিনি টেলিফোন আবিষ্কার করেন। তাছাড়া তিনি ম্যাবেল হাবার্ড নামে একটি বধির মেয়েকে বিয়ে করেন।
১৮৭৫ সালের একটি ঘটনা যা গ্রাহাম বেলকে সজাগ করে তোলে। টেলিগ্রাফে অনেকগুলো বার্তা পাঠানো নিয়ে গবেষণা করছিলেন।

এই কাজ করার সাথে বিদ্যুতের সাহায্যে শব্দ পাঠানো নিয়ে তিনি ভাবতে শুরু করেন, হঠাৎ তারের ভিতর দিয়ে এক স্প্রিংয়ের টংকারধ্বনি তাকে সচকিত করে তোলে। সেই তখন থেকেই তিনি এই কাজে মেতে উঠেন, বিজ্ঞানে এই বিষয় নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে কিন্তু গ্রাহাম বেলই প্রথম টেলিফোনীয় সঠিক নীতি ধরতে পেরেছিলেন।



তিনি বলেছিলেন বায়ুর যেমন ঘরত্বের তারতম্য হয়; তেমনি শব্দ উৎপাদনে যদি বিদ্যুৎ প্রবাহের তীব্রতার তারতম্য ঘটাতে পারি তাহলে টেলিগ্রাফে বার্তা পাঠানোর বদলে আমি শব্দধ্বনি পাঠাতে পারি। অনেক চেষ্টা করে তিনি একটা যন্ত্র তৈরি করলেন, যা আজ টেলিফোন নামে খ্যাত হয়েছে। কিন্তু টেলিফোন আবিষ্কারক কে এই নিয়ে তুমুল হৈ চৈ বাঁধে।

কারণ একই আবিষ্কারের জন্য কাজ করছেন তিনজন তাতেই এত গোলমাল, যখন আবিষ্কারর্তা নিয়ে এত হৈ চৈ তখন বেল ও তার সহকর্মী ওয়াটসন দুজনেই মিলে টেলিফোন যন্ত্র আবিষ্কার নিয়ে ব্যস্ত। ১৮৭৬ সালের ১০ই মার্চ বিকালে রিসিভার লাগানো তারের এক প্রান্ত কানে লাগিয়ে ওয়াটসন ঘরে বসে কাজ করছিলেন।

হঠাৎ শুনতে পেলেন গ্রাহাম বেলের কণ্ঠস্বর, তিনি আনন্দে ছুটে গেলেন গ্রাহামবেলর কাছে। তাকে জড়িয়ে ধরলেন, একদিন ব্রাজিলের সম্রাট ডন-পেদ্রো কানে রিসিভার লাগিয়ে বসে আছেন। অন্য প্রান্ত থেকে গ্রাহাম বেল হ্যামলেট থেকে দুটো বিখ্যাত লাইন টেলিফোনে আবৃত্তি করলেন- “To be orl not to be”…….সম্রাট চেচিয়ে বললেন-My god! It speaks!

তারপর এর প্রদর্শনীতে এই টেলিফোন দেখানো হল। এই টেলিফোন দেখার ও কথা বলার ভিড় উপচে পড়ল, মানুষের চোখে ও মনে বিস্ময়। এই যন্ত্রে কথা বলা ও শোনা। টেলিফোন আবিষ্কর্তা কে এই নিয়ে অনেক মামলা চলে। শেষে গ্রাহামবেলই টেলিফোন আবিষ্কারক হিসেবে গণ্য হন। জীবনে অনেক সম্মান পান, তবে তিনি ব্যক্তিগত জীবনে সুখী ছিলেন না।

নিঃসঙ্গ জীবনে খুব কষ্ট পেতেন, নিজের আবিষ্কৃত টেলিফোনটাকে তিনি একসময় ঘৃণা করতেন। বললেন এই জানোয়ারটাকে আমি কখনো ব্যবহার করি না। তার মানসিক যন্ত্রণাই তাকে খুব কষ্ট দিত। ১৯২২ সালে ২রা আগস্ট নিজের বাড়িতেই তিনি মারা যান। তার আবিষ্কার টেলিফোন আমাদের প্রতি মুহূর্তেই মনে করিয়ে দেয় বৈজ্ঞানিক গ্রাহাম বেলকে।



যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। বিভিন্ন শ্রেনির সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। নতুন নতুন সব শিক্ষামূলক ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন।

বি: দ্র: তোমার নিজের রচিত কবিতা, সাহিত্য বা যেকোনো শিক্ষামূলক লেখা পাঠিয়ে দাও এডুয়েটিক’র কাছে। এডুয়েটিক প্রকাশ করবে তোমার প্রিয় লেখাটি।

Leave a Comment