ইনশাআল্লাহ কখন ও কেন বলবেন?

এডুয়েটিকের ধর্মকথা বিভাগে আজ আমরা সম্পর্কে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ কখন ও কেন বলবেন? তাহলে চলুন আর দেরি না করে আজকের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। ইসলামী ‍পরিভাষাগুলোর একটি ‘ইনশাল্লাহ’। এর অর্থ হলো, যদি আল্লাহ চান অথবা আল্লাহর ইচ্ছা থাকলে এই কাজটি করা সম্ভব। ভবিষ্যত বা আগামীতে কোনো কাজ করার আগে এই পরিভাষাটি ব্যবহার করতে হয়।

আরবি উচ্চারণ-

اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

…وَ لَا تَقُوۡلَنَّ لِشَایۡءٍ اِنِّیۡ فَاعِلٌ ذٰلِکَ غَدًا اِلَّاۤ اَنۡ یَّشَآءَ اللّٰهُ

কখনই তুমি কোন বিষয়ে বলো না যে, ‘আমি ওটা আগামীকাল করব’। ইন শাআল্লাহ (আল্লাহ ইচ্ছা করলে) এই কথা না বলে; যদি ভুলে যাও, তবে তোমার প্রতিপালককে স্মরণ করো ও বলো, ‘সম্ভবত, আমার প্রতিপালক আমাকে এ অপেক্ষা সত্যের নিকটতম পথ নির্দেশ করবেন।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত ২৩-২৪)



এই আয়াতের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার উম্মতকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতকালে কোনো কাজ করার ওয়াদা বা স্বীকারোক্তি করলে এর সাথে ‘ইনশাআল্লাহ’ বাক্যটি যুক্ত করতে হবে। কেননা, ভবিষ্যতে জীবিত থাকবে কিনা তা কারো জানা নেই। জীবিত থাকলেও কাজটি করতে পারবে কিনা, তারও নিশ্চয়তা নেই। কাজেই মুমিনের উচিত মনে মনে এবং মুখে স্বীকারোক্তির মাধ্যমে আল্লাহর উপর ভরসা করা। ভবিষ্যতে কোন কাজ করার কথা বললে এভাবে বলা দরকার, যদি আল্লাহ চান, তবে আমি এ কাজটি আগামী কাল করব। ইনশাআল্লাহ বাক্যের অর্থ তাই।

আয়াতের বিষয়ে মুফাসসিরগণ বলেন যে, ইয়াহুদীরা নবী (সাঃ)-কে তিনটি কথা জিজ্ঞাসা করেছিল। আত্মার স্বরূপ কি এবং গুহার অধিবাসী ও যুল-কারনাইন কে ছিল? তাঁরা বলেন যে, এই প্রশ্নগুলোই ছিল এই সূরা অবতীর্ণ হওয়ার কারণ। নবী (সাঃ) বললেন, আমি তোমাদেরকে আগামী কাল উত্তর দেব। কিন্তু এর পর ১৫ দিন পর্যন্ত জিবরীল (আঃ) অহী নিয়ে এলেন না। অতঃপর যখন এলেন, তখন মহান আল্লাহ ‘ইন শা-আল্লাহ’ বলার নির্দেশ দিলেন। আয়াতে (আগামী কাল) বলতে ভবিষ্যৎ বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, অদূর ভবিষ্যতে বা দূর ভবিষ্যতে কোন কাজ করার সংকল্প করলে, ‘ইন শা-আল্লাহ’ অবশ্যই বলে নিও। কেননা, মানুষ তো জানেই না যে, যা করার সে সংকল্প করে, তা করার তাওফীক সে আল্লাহর ইচ্ছা থেকে পাবে, না পাবে না?

এই আয়াতের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার উম্মতকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতকালে কোনো কাজ করার ওয়াদা বা স্বীকারোক্তি করলে এর সাথে “ইনশাআল্লাহ” বাক্যটি যুক্ত করতে হবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সুলাইমান ইবনে দাউদ আ. বললেন, আমি আজ রাতে আমার সত্তর জন স্ত্রীর উপর উপগত হব। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে- নব্বই জন স্ত্রীর উপগত হব, তাদের প্রত্যেকেই একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেবে যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। তখন তাকে ফিরিশতারা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, বলুন, ইনশাআল্লাহ। কিন্তু তিনি বললেন না। ফলে তিনি সমস্ত স্ত্রীর উপর উপনীত হলেও তাদের কেউই কোনো সন্তান জন্ম দিল না। শুধু একজন স্ত্রী একটি অপরিণত সন্তান প্রসব করল।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যার হাতে আমার প্রাণ, তিনি যদি বলতেন ‘ইনশাআল্লাহ’, তবে অবশ্যই তার ওয়াদা ভঙ্গ হত না। আর তা তার ওয়াদা পূর্ণতায় সহযোগী হত’৷ (বুখারীঃ ৩৪২৪, ৫২৪২,৬৬৩৯, ৭৪৬৯, মুসলিম, ১৬৫৪, আহমাদঃ ২/২২৯, ৫০৬)

হাদিস দ্বারাও সাব্যস্ত যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম কাজ শুরুর আগে ইনশাআল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করতেন। হাদিসে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কেউ ইনশাআল্লাহ বলে কোনো কসম করলে তার গুনাহ হবে না।

আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বিভিন্ন জায়গায় নবী-রাসূল ও তাদের জাতির দিকে ইঙ্গিত করে ইনশাল্লাহ শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন সুরা বাকারায় মুসা আ.-এর কওমের বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে ,

قَالُوا ادۡعُ لَنَا رَبَّکَ یُبَیِّنۡ لَّنَا مَا هِیَ ۙ اِنَّ الۡبَقَرَ تَشٰبَهَ عَلَیۡنَا ؕ وَ اِنَّاۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ لَمُهۡتَدُوۡنَ

‘তারা বলল, ‘তুমি আমাদের জন্য তোমার রবের নিকট দোয়া কর, তিনি যেন আমাদের জন্য স্পষ্ট করে দেন, তা কেমন? নিশ্চয় গরুটি আমাদের জন্য সন্দেহপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। আর নিশ্চয় আমরা আল্লাহ চাহে তো পথপ্রাপ্ত হব’। ( সুরা বাকরা, আয়াত, ৭০)



একটি বিবাদের মীমাংসার জন্যে বনী ইসরাইলের লোকেরা হযরত মূসা (আঃ)-এর শরণাপন্ন হলো। যেহেতু সাধারণ উপায়ে এ সমস্যার সামাধান করা সম্ভব ছিল না, তাই হযরত মূসা (আ.) অলৌকিক পন্থায় এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন। তিনি বনী ইসরাইলীদের বললেন, আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন যে, একটি গরু জবাই করতে হবে। এরপর জবাই করা গরুর এক টুকরো গোশত নিহত ব্যক্তির গায়ে স্পর্শ করলে সে জীবিত হয়ে হত্যাকারীর নাম বলে দেবে।

আয়াতে এই ঘটনার বর্ণনায় ইকরিমাহ রহ. বলেন, যদি তারা ‘ইনশাআল্লাহ’ ‘আল্লাহ ইচ্ছে করলে’ বাক্য না বলত, তবে কখনই সে ধরনের গরু খুঁজে পেত না। ( তাফসিরে তাবারি, ২/৮১)

হাদিস দ্বারাও সাব্যস্ত যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম কাজ শুরুর আগে ইনশাআল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করতেন। হাদিসে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কেউ ইনশাআল্লাহ বলে কোনো কসম করলে তার গুনাহ হবে না। ( তিরমিজি, ১৪৫১)

এতএব কোনো কাজ শুরুর আগে অবশ্যই ইনশাআল্লাহ বলা উচিত। কারণ মানুষ অনেক দুর্বল এবং কাজের ক্ষেত্রে অন্যের ওপর নির্ভরশীল, তাই কাজ শুরুর আগে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য কামনা একান্ত কাম্য। কোরআনও এটাই শিক্ষা দেয়।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। বিভিন্ন শ্রেনির সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। নতুন নতুন সব শিক্ষামূলক ও বিনোদনমূলক ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং বেল আইকনে ক্লিক করুন।

এগুলো দেখুন

সুবহানাল্লাহ

সুবহানাল্লাহ কখন ও কেন বলবেন?

এডুয়েটিকের ধর্মকথা বিভাগে আজ আমরা সম্পর্কে আলোচনা করবো সুবহানাল্লাহ কখন ও কেন বলবেন? তাহলে চলুন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *