শিশুর খাবারে অরুচি

আজকে আমরা এডুয়েটিকের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে আলোচনা করবো শিশুর খাবারে অরুচি – কিভাবে শিশুকে খাবারের প্রতি উৎসাহী করে তুলবেন। তাহলে চলুন আজকে আলোচ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।

দিন দিন শিশুর ক্রমশ স্বাস্থ্যহানি দেখে মায়েরা দুশ্চিন্তা পরে যান। আপনি কি একবারও ভাবছেন, আপনার আদরের শিশুটি আগের মত আর খাচ্ছে না, দিন দিন রোগাটে হয়ে যাচ্ছে। মুখের সামনে খাবার ধরলে হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে এটাও বলে ‘এই খাবার আমার পছন্দ না। আমি এটা খাবো না। ওটা খাবো না।’

আবার অনেক মায়েদের দেখা যায়, খাবারের থালা নিয়ে বাচ্চার পিছনে দৌড়াতে। অভিযোগ একটাই, তাদের বাচ্চা খেতে চায় না।

শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মায়ের শালদুধ হবে নবজাতকের প্রথম খাবার। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শালদুধ (গাঢ় এবং হলদেটে) দিতে পারলে শিশু মৃত্যুর হার ৩৭ শতাংশ কমে যায়।

যাই হোক, কেনো শিশু খেতে চায় না, কী করলে সে ঠিকমতো খাবে, কিভাবে বাচ্চাকে খাওয়ানো দরকার – এসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।



শিশু কেন খেতে চায় না ?

মূলত শিশুদের না খাওয়ার অন্যতম কারণ হলো অনিয়ম। আর এর জন্য বেশিরভাগ ডাক্তাররাই বাবা মায়েদের অসচেতনতাকে দায়ী করেন। আসলে তারা এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করেন না, ভুলবশত এটা করেন। আবার কিছুক্ষেত্রে শিশুর আবদার মেটাতে গিয়েও বিপত্তি দেখা দেয়।

বাইরের লোভনীয় ও মুখরোচক খাবারগুলোতে শিশুকে অভ্যস্ত করে তুললে ঘরে তৈরি খাবারের প্রতি তাদের চাহিদা কমে যায়। খাদ্যাভাস নষ্ট হয়। অনেক অভিভাবক আবার ভাত খেতে না খেতেই শিশুকে বিস্কুট, চকলেট, রুটি ইত্যাদি খাওয়াবেন। আবার অনেকে দীর্ঘসময় ধরে খাওয়ান – এটা লক্ষ করেন না যে শিশুর পেটে খিদে আছে না নেই।

শিশু কাঁদলেও অনেকে মনে করেন শিশুর খিদে পেয়েছে। অথচ শিশু অন্য কারণেও কাঁদতে পারে। বাচ্চা একবেলা ঠিকমতো খায়নি বলে অনেকে ব্যাকুল হয়ে যান। আবার দেখা যায়, সকাল ৭ টায় পেট পুরে খাওয়াতে পারেননি বলে সকাল ৮ টায় পুনরায় খাওয়ানোর জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করে দেন।

আপনার এসব কর্মকাণ্ডই শিশুর জন্য ক্ষতিকর। একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন, পূর্বের খাবার হজম হলেই শিশুর খিদে পায়। আর খিদে পেলে শিশু খাবেই। যদি সুনির্দিষ্ট সময় ছাড়া শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাস করা হয়, তাহলে কিছু কিছু ক্ষতির শিকার হবে ওই শিশু।

শিশুকে খাবারে উৎসাহী করতে যা করবেন

বাচ্চাদের খাওয়ানোর উপায় কি? খাবারের প্রতি শিশুর পূর্ণরুচি ফিরিয়ে আনতে আমরা আছি আপনার পাশে। শিশু না খাওয়ার পেছনে দায়ী যথাযথ কারণ ও সমাধান তুলে ধরলাম। চেষ্টা করুন এগুলো মেনে চলতে। দেখবেন, আপনার প্যারেন্টিং হবে সেরা প্যারেন্টিং।

১. পূর্ণভাবে খিদে

অনেক শিশুই পরিপূর্ণভাবে খিধা না লাগলে খেতে চায় না। অথবা খেতে বসলেও পরিপূর্ণভাবে খিদা না লাগার কারণে প্লেটের ভাত শেষ করে না।

২. খাওয়া শেষ না হতেই খাওয়া

আমরা সাধারণত শিশুদের বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। হ্যা, এটা খুব ভালো। এতে শিশুর রুচি পরিবর্তন হয় এবং বহুমুখী খাদ্যের চাহিদা বাড়ে। কিন্তু মাঝখানে একটা ছোট্ট ভুল আমরা করে বসি। দেখা যায়, বিস্কিট খাওয়া শেষ হতে না হতেই আম, কলা, কাঁঠাল কিংবা চকলেট এর খাবারগুলো তাকে খেতে দেই। এতে শিশুর ভাতের প্রতি রুচি নষ্ট হয়ে যায় এবং খাবারের প্রতিও অনীহা দেখা দেয়। ফলে শিশুর না খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

৩. অসুস্থতা

অসুস্থতার কারণেও শিশুদের খাবারে অরুচি দেখা দেয়। ঠাণ্ডা, জ্বর কিংবা পেট খারাপ থাকলে শিশুরা নিজেকে খাবার থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে রাখতে পারে। তবে এটা বেশ কিছু সময় পর ঠিক হয়ে যায়। এছাড়া শিশুর জিহ্বায় ঘায়ের আবির্ভাব ঘটলেও শিশুরা খাবার গ্রহণে অনীহা দেখায়। যদি শিশুর পেটে কিংবা অন্ত্রে কোনো জটিলতা দেখা দেয়, তবে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

৪. খাবারে এলার্জি

খাবারে এলার্জি – শিশু না খাওয়ার আরেকটি কারণ। খাদ্যে এলার্জির কারণে অনেক শিশুই স্বাভাবিক খাবার খেতে চায় না। ৪ থেকে ৮ শতাংশ শিশু খাবারে এলার্জির কারণে অনেক খাবার যেমনঃ ফল, শাক, ডিম, গরুর মাংস ইত্যাদি খায় না। তাই খেয়াল রাখুন, খাবারে বাচ্চার এলার্জি হচ্ছে কিনা।

৫. খাবারের স্বাদ

শিশুরা খাবারের স্বাদ ঠিকমত গ্রহণ করতে পারে না। যার কারণে, বার বার একই ধরনের খাবার গ্রহণের ফলে শিশুরা কিছুটা বিরক্ত বোধ করে। তাই চেষ্টা করুন শিশুর পছন্দসই খাবার রান্না করতে। প্রতিদিন তাকে জোর করে নির্দিষ্ট কোনো খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। এতে খাবারের প্রতি অনীহা আরো বেড়ে যায়। এজন্য একই খাবারকে নতুনভাবে রান্না করুন।

৬. অযথা জোর করবেন না

খাওয়ানোর জন্য শিশুদেরকে অযথা জোর করবেন না। শিশুরা সাধারণত আনন্দের সহিত খেতে পছন্দ করে। কিন্তু যখন তাকে একবার জোর করে খাওয়ানো হয় তখন সে প্রচণ্ড ভয় পায়। আর এতে খাবারের প্রতি তার আগ্রহ কমতে থাকে। এমনকি এক সময় খাবারের প্রতি তার বিতৃষ্ণাও দেখা দিতে পারে।

৭. সময়সূচী অনুযায়ী খেতে দিন

বয়সের পার্থক্য অনুযায়ী শিশুদের ক্ষুধা লাগার কিছুটা ভিন্নতা আছে। নিয়ম বা সময়সূচী অনুযায়ী শিশুদের খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুললে খাবারের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ে। শিশুকে কী খাওয়াচ্ছেন, তার চেয়ে বড় কথা হলো, কখন খাওয়াচ্ছেন। শিশু খাচ্ছে না কিংবা খেতে চাইছে না – এমন অযুহাত দেখিয়ে তাকে বার বার খাবার দিবেন না। যদি শিশু একেবারেই খেতে না চায় তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। মনে রাখবেন, যখন-তখন খাবার দিলে বাচ্চাদের ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায়। তাই এ কাজটি থেকে বিরত থাকুন এবং বাচ্চাকে রুটিন অনুযায়ী খাবার দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।

৮. খাবারের বিরতি

বয়সভেদে শিশুদের খাবারের মাঝে কিছুটা বিরতিও প্রয়োজন। কেননা, খিদে না লেগেই বাচ্চাকে খাবার দিলে সে খাবারের প্রতি অনীহা দেখা দিতে পারে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২ থেকে ৩ বছর বয়সী একজন শিশুর প্রতিবেলা খাবারের ফাঁকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় বিরতি দেওয়া উচিত। আর এই সময়টাতে যদি শিশুকে অন্য কোনো খাবার দেওয়া না হয় তবে তার পরিপূর্ণভাবে ক্ষিধা লাগবে। অর্থাৎ শিশু স্বাচ্ছন্দ্যে খাবার গ্রহণ করবে।

আবার, ৩-৪ বছর বয়সী একজন শিশুর প্রতিবেলা খাবারের ফাঁকে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় বিরতি দেওয়া উচিত। প্রতিবেলা খাবারের ফাঁকে এই বিরতির সময়টা শিশু বয়স থেকে কিশোর বয়স পর্যন্ত একটু করে বৃদ্ধি পাবে। এক সময় বড়দের মতো তিন বেলা খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৯. খাবার সময় কার্টুন বা টিভি দেখা নয়

অনেক সময় শিশুরা খেতে না চাইলে তাদেরকে খাওয়ানোর জন্য আমরা বেশ কিছু ভুল পন্থা অবলম্বন করি। আর সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো টিভিতে তাদের পছন্দসই কার্টুন দেখা।

হ্যা, টিভিতে কার্টুন দেখাতে দেখাতে শিশুদের খাওয়ানো হলে এক সময় তারা সেটাতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং টিভি না দেখলে খাওয়া মুখেই নিবে না। এছাড়া টিভির প্রতি মনোযোগ থাকার কারণে তাকে খাবার খাওয়ানোর জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। এমনিতেই বেশি সময় ধরে টিভি দেখা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এমনকি টিভি দেখার সময় খাওয়ালে শিশুর বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা, টিভির দিকে মনোযোগ থাকার জন্যে পাকস্থলী থেকে প্রয়োজনীয় পাচক রস নিঃসৃত হয় না।

১০. খাবারে ভিন্নতা আনুন

আপনি, আমি, আমরা কেহই প্রতিদিন একই ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করি না। সবাই একটু ভিন্ন স্বাদের খাবার খেতে পছন্দ করি। শিশুদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। তাই প্রতিদিন তাকে একই রকমের খাবার না দিয়ে খাবারে বৈচিত্র আনুন। যদি শিশু মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে তবে সে যা খেতে চায় সে অনুযায়ী খাবার বানিয়ে দিন। পছন্দের খাবারটি তাকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি করে পরিবেশন করুন। তবে তাকে বাইরের খাবারের অপকারিতা সম্পর্কে অবগত করুন।

১১. বাইরের খাবার

বাইরের খাবার যে একেবারেই দেবেন না এমনটা নয়। কেননা, বড়দের সঙ্গে বিয়ে কিংবা বার্থডে পার্টিতে গেলে, পরিবারের সাথে ঘুরতে গেলে নিশ্চয়ই তাকে বাইরের খাবার খেতে হবে। তা ঠিক আছে। কিন্তু প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে রুটিন করে তার জন্য চকলেট, কেক, পটেটো কিংবা মুখরোচক খাবারগুলো আনবেন না বা তাকে বাইরে খেতে নিয়ে যাবেন না। মুখরোচক এই খাবারগুলো গ্যাস্ট্রিকের পাশাপাশি শিশুদের নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করে।

১২. যখন তখন খাবার

রুটিন অনুযায়ী শিশুদের খাবার খাওয়াই ভালো। কিন্তু শিশুরা যখন তখন খাবার খেলে যথাসময়ে আর তাদের খিদে লাগবে না। আর সে খেতেও পারবে না।

দেখা যায়, অনেক শিশু বিদ্যালয় থেকে ফিরেই বিস্কিট-চানাচুর কিংবা ফলমূলের রস খেয়ে থাকে। আর তার এক ঘণ্টা পরেই হয়তো দুপুরের খাবার গ্রহণের সময় হয়ে যায়। এ সময় সে ঠিকমত খেতে চাইবে না, কেননা ইতোমধ্যেই তার ক্ষুধা নষ্ট হয়ে গেছে।

আবার অনেক শিশুকে দেখা যায় সারাদিনে যখন তখন বিস্কুট, কলা, রুটি, লজেন্স কিংবা আইসক্রিম এর মত খাবারগুলো পেট ভর্তি করে খেতে। যার ফলে মূল খাবারের সময় তেমন কিছুই খেতে চায় না।

১৩. অতিরিক্ত দুধ খাওয়ানো

ছোট বাচ্চাদের পেটও ছোট থাকে। এ কথাটি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আমরা সবাই জানি, শিশুদের ৬ মাস বয়স পর্যন্ত বুকের দুধই তাদের জন্য উত্তম এবং পুষ্টিকর খাবার। কিন্তু ছয় মাস হওয়ার পরেও শক্ত খাবার না দিয়ে শিশুকে আগের মতই বুকের দুধ খাওয়ালে অন্য খাবারের প্রতি তার অনীহা হতে পারে। কেননা, ছোট পেটে দুধ খাওয়ার পরে অন্য খাবার গ্রহণের পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না। তাই ৬ মাস পর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো কমিয়ে দিয়ে শক্ত খাবার খাওয়ার জন্য জায়গা করে দিতে হবে।



১৪. খাবারের ধরণ বা গন্ধে

খাবারে গন্ধ বা খাবার পরিবেশনের ধরনে অনেক শিশুরই সমস্যা থাকে। যেমনঃ অনেক শিশু আছে যারা অতিরিক্ত নরম খাবার পছন্দ করে না। এছাড়া গন্ধের জন্য তারা শাকসবজি ও ফলমূল খেতেও ‘না’ সূচক শব্দ ব্যবহার করে। একে texture sensitivity বলে।

১৫. মাছ, মাংস ও ডিম খায় না

অনেক শিশুই আছে যারা মাছ, মাংস ও ডিম খেতে পছন্দ করে না। শিশুরা এসব গ্রহণ না করলে একেবারেই টেনশন নিবেন না। শুধু আপনাকে খাবার পরিবেশন এর ধরনটা পাল্টাতে হবে। মাছ খেতে না চাইলে তাকে ফিশকাটলেট বানিয়ে দিন। চিংড়ির সাথে নুডুলস রান্না করুন। মাংস খেতে না চাইলে তাকে চিকেন ফ্রাই বা কাবাব বানিয়ে দিন। ডিম খেতে না চাইলে সুজির সাথে বা খিচুড়ির সাথে ডিম রান্না করুন। ডিমের স্যুপ বা চপও দিতে পারেন।পাইছি। আর কেটেও দিছি। আর তুই কি বললি বিশ্বাস করার কথা তাই না? আমি কি তোরে বিশ্বাস করি না। আমি তোরে ওর বাসার ওখানে নিয়ে গেছি। আর তোমার সমস্যা সমাধানের জন্য আমার বেষ্টুর সাথেও কথা বলিয়ে দিছি। আর তুই কি বললি। বাহ! ভালো একটা কথা বলছো।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। বিভিন্ন শ্রেনির সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। নতুন নতুন সব শিক্ষামূলক ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন।

এগুলো দেখুন

শিশুর খাবার গ্রহণে আগ্রহ বাড়ানোর উপায়

শিশুর খাবার গ্রহণে আগ্রহ বাড়ানোর উপায়

আজকে আমরা এডুয়েটিকের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে আলোচনা করবো শিশুর খাবার গ্রহণে আগ্রহ বাড়ানোর উপায় নিয়ে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *