জীবনী: লর্ড কেলভিন

লর্ড কেলভিন

জীবনী: লর্ড কেলভিন আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের গোড়াপত্তনকারী বলে পরিচিত সারা বিশ্বের যে দু’চারজন শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীর নাম উল্লেখ করা যায় লর্ড উইলিয়াম থমসন কেলভিন ছিলেন তাদের অন্যতম। তবে তার খ্যাতি সর্বাধিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাপের মাত্রা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে।

আন্তর্জাতিকভাবে তাপের পরিমাপের ক্ষেত্রে তিনটি স্কেল আছে। এগুলো হলো-সেন্টিগ্রেট স্কেল, ফ্যারেনহাইট স্কেল এবং কেলভিন স্কেল। তৃতীয় এই কেলভি স্কেলের যিনি প্রবর্তক তিনি হলেন বিজ্ঞানী থমসন কেলভিন।তাপমাত্রা নির্ণয় এবং শক্তির নিত্যতার সূত্র আবিষ্কারের জন্যই ব্রিটিশ সরকার তাকে ১৮৯২ সালে লর্ড উপাধিতে ভূষিত করেন। তার নাম আর লর্ড কেলভিন।

তাপমাত্রার পরিমাপ নির্ণয় ছাড়াও তার আরো অবদান আছে- তিনি চুম্বকের গাণিতিক ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ করেছেন, আলোর তড়িৎচৌম্বকীয় সূত্রের মৌলিক ধারণাও তিনিই দিয়েছেন। তারপর পৃথিবীর বয়স নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ভূ-তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন।

সমুদ্রতলের টেলিগ্রাফ পদ্ধতি এবং সমুদ্রের তলদেশে বৈদ্যুতিক কেবল বসানোর ক্ষেত্রও তার অবদান। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মোটকথা, তার সময়ে তিনিই ছিলেন সারা বিশ্বের প্রভাবশালী পদার্থবিজ্ঞানী। বিজ্ঞানের কৃতিপুরুষ লর্ড কেলভিনের জন্ম হয়েছিল ১৮২৪ সালের ২৬ জুন।

কেলভিনরা ছিলেন সাত ভাই-বোন। এর মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। তার যখন মাত্র ৬ বছর বয়স তখন তার মায়ের মৃত্যু হয়। কেলভিনের পিতা ছিলেন একজন পাঠ্যপুস্তক প্রণেতা। তিনি অংকের বই লিখতেন। তারপর কেলভিনের যখন স্কুলে যাবার বয়স হল তখন পিতাই তাকে পড়াতে লাগলেন।

যেহেতু তিনি নিজে ছিলেন অংক বইয়ের লেখক, তাই ছেলেকেও অঙ্ক শেখাতে আরম্ভ করলেন। ১৮৩২ সালে কেলভিনদের পরিবার বেলফাস্ট থেকে গ্ল্যাসগোতে এসে বসবাস করতে থাকেন। কেলভিনের যখন মাত্র ১০ বছর বয়স তখন তাকে গ্ল্যসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়।

ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন কেলভিন। তার যখন মাত্র ১৫ বছর বয়স তখনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পৃথিবীর গঠন প্রকৃতি’ বিষয়ক একটি রচনা প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং স্বর্ণপদক লাভ করেন। এই প্রবন্ধে তিনি গাণিতিক হিসাবের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর পরিমাপ দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন।



তিনি যে পরবর্তীকালে একজন বড় পন্ডিত ব্যক্তি হবেন তার নমুনা তখনি পাওয়া গিয়েছিল। তিনি যখন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুল সেকশনে পড়তেন তখন তিনি ফ্রান্সের বিখ্যাত তাপবিজ্ঞানী জোসেফ ফোরিয়ারের অ্যানালাইটিক্যাল থিওরি অব হিট গ্রন্থটি পড়তেন। এই বইতে অংকের হিসাব কষে দেখানো হয়েছিল তাপ কেমন করে কোন বস্তুর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।

১৮৪১ সালে কেলভিন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৮৪৫ সালের সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে তিনি বি. এ. পাস করেন। ১৮৪৫ সালে কেলভিন আরেক বিখ্যাত তাপবিজ্ঞানী জর্জ গ্রীনের বই ‘অ্যন এসে অন দি অ্যাপ্লিকেশন অব ম্যাথমেটিক্যাল অ্যানালাইসিস ইন দি থিওরিস অব ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড ম্যাগনেটিজম’ এর একটি কপি হাতে পান।

পরবর্তী সময়ে এই বইটিই তাকে গবেষণার পথনির্দেশ দান করেছিল। এই বইটির প্রভাব তার জীবনে ছিল প্রায় আজীবন। ক্যামব্রিজের পড়া শেষ করে কেলভিন প্যারিস গমন করেন। সেখানে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের উপর গবেষণা করতে শুরু করেন। ১৮৪৬ সালে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যাচারাল ফিলোসফির অধ্যাপকের একটি পথ খালি হয়।

কেলভিনের পিতা আগে থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জড়িত ছিলেন, তার কিছুটা প্রভাবও ছিল। তিনি নিজের ছেলেকে এই পথটি পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রচণ্ড ধরাধরি করতে লাগলেন। অবশেষে তিনি কৃতকার্যও হলেন। কেলভিন মাত্র ২২ বছর বয়সে গ্ল্যাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিয়োজিত হলেন।

যদিও ক্যামব্রিজে থাকার সময় থেকেই তার বিজ্ঞান প্রতিভার স্ফুরণ হয়েছিল, কিন্তু তার বিজ্ঞানী জীবনের গোড়াপত্তন হলো পুনরায় গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকে। ১৮৪৭-৪৯ সালের মধ্যে তিনি ব্রিটেনের অন্যতম অংকশাস্ত্রবিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী জর্জ গ্যাব্রিয়েল স্টোকস এর সাথে যৌথভাবে হাইড্রোডাইনামিক নীতির উপর কয়েকটি মূল্যবান প্রবন্ধ রচনা করেন।

১৮৪৮ সালেই তিনি তাপমাত্রা নিরূপণের একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যা কেলভিন স্কেল নামে খ্যাত। ফ্রান্সের পদার্থবিজ্ঞানী সাদী ক্যারনটের সূত্রের উপর ভিত্তি করে এই তাপমাত্রার নতুন স্কেল আবিষ্কার করেন। যদিও তিনি এই বিষয়ে একমত ছিলেন না যে তাপকে শক্তিরূপে সংরক্ষণ করা সম্ভব।

১৮৫১ সালে তিনি ক্যারনটের সূত্রের ব্যাখ্যা করে ‘অন দি সিনথেটিক্যাল থিওরি অব হিট’ নামে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন। তিনি তার কর্মজীবনে ৬০০টিরও অধিক বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনা করেছেন এবং প্রায় এক ডজন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নাম রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

তিনি ১৮৫১ সালে ব্রিটেনের রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ১৮৯০ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত রয়্যাল সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। লর্ড কেলভিনের মৃত্যু হয় ১৮৯৫ সালের ১৭ই ডিসেম্বর স্কটল্যান্ডের লার্জস এর নিকটবর্তী নেদারহল নামক একটি শহরে। তাকে সমাধিস্থ করা হয় ওয়েস্ট মিনিস্টার এবেতে।



যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। বিভিন্ন শ্রেনির সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। নতুন নতুন সব শিক্ষামূলক ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন।

বি: দ্র: তোমার নিজের রচিত কবিতা, সাহিত্য বা যেকোনো শিক্ষামূলক লেখা পাঠিয়ে দাও এডুয়েটিক’র কাছে। এডুয়েটিক প্রকাশ করবে তোমার প্রিয় লেখাটি।

Leave a Comment