নামাজ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই ফরজ একটি ইবাদাত। তাই পুরুষের পাশাপাশি নারীদের নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম জানা অতীব জরুরি। হযরত মোহাম্মদ (সা:) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার যে আমলের হিসাব নেয়া হবে সেটা হলো নামাজ।’ সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, নামাজ কত বড় একটি আমল।
- আরো পড়ুন: কাজী নজরুল ইসলাম – MCQ Questions
- আরো পড়ুন: জসিম উদ্দীন – MCQ Questions
- আরো পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – MCQ Questions
এডুয়েটিকের ধর্মকথা বিভাগে আজ আমরা নারীদের জন্য নামাজের নিয়মগুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো। নামাজ নারী-পুরুষ উভয়ের বাধ্যতামূলক ইবাদত হলেও উভয়ের নামাজ আদায়ের নিয়মে কিছু ভিন্নতা আছে। কীভাবে দাঁড়াতে হবে, কীভাবে হাত বাঁধতে হবে এবং অন্যান্য কাজগুলোই বা কীভাবে করতে হবে এটি নিয়ে অনেক নারীই দ্বিধাগ্রস্থ থাকেন।
নারীদের নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম
নামাজের শুরুতে ওযু অথবা গোসল করুন (যেটি আপনার জন্য প্রয়োজন)। আপনার পোশাক এবং নামাজের জায়গাও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি। আপনার সতর ঢাকা রয়েছে কিনা তা খেয়াল করুন। নারীদের সতর বলতে হাত, পা এবং মুখম-ল ছাড়া বাকি সবকিছু ঢেকে রাখাকে বোঝায়।
এসব ঠিক থাকলে ক্বিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়ান। আপনি এখন যে নামাজটি আদায় করতে যাচ্ছেন, তার জন্য মনোনিবেশ করুন। নামাজের সময় আপনার চোখ সেই স্থানে রাখুন যেখানে আপনার সেজদাটি পড়বে। নামাজ আদায়ের সময় চোখ এদিক ওদিক না করাই ভালো। আপনার পায়ের আঙ্গুলগুলো ক্বিবলার দিকে সোজা রাখুন। দাঁড়ানোর সময় নারীদের দুই পা যথাসম্ভব কাছাকাছি রাখা উচিত। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে দুই পায়ের মাঝখানের দূরত্ব কমপক্ষে ৪ আঙ্গুল হওয়া উচিত।
১. তাক্ববীর-ই-তাহরীমা
এসময় নারীরা দুই হাত কাধ বরাবর সমান উচ্চতায় জাগাবে। দুই হাতের আঙ্গুলগুলো কাছাকাছি থাকবে এবং মুখ ক্বিবলার দিকে ফেরানো থাকবে। দুই চোখে সেজদার স্থানে রাখতে ভুলবেন না।
তাক্ববীর-ই-তাহরীমা এর দোয়া:
‘আল্লাহু আকবার’
অর্থ: আল্লাহ মহান
২. ক্বিয়াম (সানা)
এ সময় নারীরা দুই হাত বুকের ওপর সমান করে বাধবে। ডান হাত বাম হাতের উপরে থাকবে। হাতের আঙ্গুলগুলো সমান অবস্থায় থাকবে। ক্বিয়ামে পুরুষেরা ডান হাতের আঙ্গুলগুলো দিয়ে বাম হাত পেচিয়ে রাখে। যেটা নারীরা করবে না।
ক্বিয়াম (সানা) এর দোয়া:
‘সুবহানাকা আল্লহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ মিশকাত)
অর্থ: হে আল্লাহ্! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি প্রশংসাময়, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মর্যাদা অতি উচ্চে, আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোনো মাবুদ নেই।
সানা শেষে ‘আউজুবিল্লাহি মিনাস শাইতোয়ানির রাজীম’ এবং বিসমিল্লাহির রাহ্ মানির রাহীম’ বলে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। সূরা ফাতিহা পাঠের পরে অন্য যেকোন একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। তারপরে ‘আল্লাহু-আকবর’ বলে রূকুতে যেতে হবে।
৩. রূকু
রূকুতে এসে নারীরা এই পরিমাণ ঝুকবেন, যাতে করে আঙ্গুল দিয়ে হাটু স্পর্শ করা যাবে। আঙ্গুল দিয়ে হাটু স্পর্শ করার সময় আঙ্গুলগুলো যেন ছড়িয়ে না থেকে সমানভাবে পাশাপাশি থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
রূকুতে পুরুষরা হাটু সোজা করে ঝোকে। কিন্তু নারীরা হাটু বাঁকা করে সামনের দিকে ঝুকবে। এ সময় দুই চোখ পায়ের আঙ্গুলের দিকে থাকবে। রূকুতে থাকাবস্থায় নিম্নোক্ত দোয়াটি ৩ বার পড়তে হবে।
রূকু এর দোয়া:
সুবহা-না রাব্বি’আল আজীম (তিরমিজি, আবু দাউদ)
অর্থ: আমার প্রভু পবিত্র ও মহামহিম
- আরো পড়ুুন: paragraph: Load-shedding (বাংলা অর্থসহ)
- আরো পড়ুন: paragraph: A Book Fair (বাংলা অর্থসহ)
- আরো পড়ুন: paragraph: Plysical Exercise (বাংলা অর্থসহ)
৪. ক্বিয়ামাহ
ক্বিয়ামাহ হচ্ছে রূকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো এবং সেজদায় যাওয়ার পূর্বাবস্থা। রূকু থেকে ফেরা সময় ক্বিয়ামাহ এর দোয়া পড়তে হয়।
ক্বিয়ামাহ এর দোয়া:
সামিআল্লাহ হুলিমান হামীদা, রাব্বানালাকাল হাম্দ।
অর্থ: যারা আল্লাহ’র প্রসংশা করেন, তিনি সবই শোনেন। আমাদের প্রভু, সকল প্রসংশা আপনারই।
৫. সিজদা
ক্বিয়ামাহ এর দোয়া শেষে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সিজদায় যেতে হবে। সেজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাত, তারপরে নাক এবং সবশেষে কপাল ভূমিতে স্পর্শ করবে। এসময় চোখ নাকের দিকে রাখতে হবে। নারীদের ক্ষেত্রে তাদের সকল অঙ্গ (বাহু, হাটু, পা) যথাসম্ভব একে অপরের এবং ভূমির কাছাকাছি রাখতে হবে। পায়ের আঙ্গুলগুলো ক্বিবলামূখী রাখুন।
সিজদার দোয়া:
সুবহা-না রাব্বি’আল আলা
অর্থ: আমার রবের পবিত্রতা ও মহিমার বর্ণনা করছি, যিনি সবার উপরে।
সিজদায় উক্ত দোয়া কমপক্ষে ৩ বার পাঠ করে ‘আল্লাহ আকবর’ বলে সোজা হয়ে বসতে হবে। পুনরায় ‘আল্লাহ আকবর’ বলে সিজদায় গিয়ে সিজদার দোয়া পাঠ করতে হবে। প্রতি রাকাআতে মোট ২ বার সিজদা করতে হয় এবং প্রতিবারে উপরোক্ত দোয়াটি কমপক্ষে ৩ বার পাঠ করতে হয়। দুই সিজদার মাঝখানে বসে স্বল্প সময়ে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তে হয়:
আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ারহামনি, ওয়াহদিনি, ওয়া আফিনি, ওয়ারযুকনি। (মুসলিম, মিশকাত)
অর্থ: হে আল্লাহ আপনি আমাকে মাফ করুন, আমাকে রহম করুন, আমাকে হেদায়েত দান করুন, আমাকে শান্তি দান করুন এবং আমাকে রিজিক দান করুন।
এরপর সেজদা শেষ করে সরাসরি দাঁড়িয়ে যেতে হবে। আর এইভাবেই ১ টি রাকাআত এর কার্যক্রম শেষ হবে। দ্বিতীয় রাকাআত এর জন্য আবার হাত বাঁধা অবস্থাতেই ‘আউজুবিল্লাহি মিনাস শাইতোয়ানির রাজীম’ এবং বিসমিল্লাহির রাহ্ মানির রাহীম’ বলে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
সূরা ফাতিহা পাঠের পরে অন্য যেকোন একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। তারপরে ‘আল্লাহু-আকবর’ বলে রূকুতে যেতে হবে। রূকু থেকে সিজদাহ পর্যন্ত কাজগুলো আগের নিয়মেই সম্পন্ন হবে। তবে দ্বিতীয় রাকাআতে সিজদাহ শেষে সরাসরি উঠে না গিয়ে বসতে হবে।
৬. শেষ বৈঠক
শেষ বৈঠকে বসাবস্থায় তিনটি দোয়া পড়তে হবে। প্রথমে তাশাহুদ, তারপরে দরুদ শরীফ এবং সবশেষে দোয়া মাসুরা। দোয়া তিনটি পড়া শেষ করে ডানে বামে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করতে হবে।
তাশাহুদ এর দোয়া:
আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়াতু, ওয়াত্ তাইয়িবাতু। আস্সালামু ‘আলাইকা আইয়্যুহান নাবীয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন। আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আননা মুহাম্মাদান আদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থ: কি মৌখিক, কি দৈহিক, কি আর্থিক সকল ইবাদাত এক মাত্র আল্লাহ’র জন্য/সমস্ত সম্মানজনক সম্বোধন আল্লাহর জন্যে। সমস্ত শান্তি কল্যাণ ও পবিত্রার মালিক আল্লাহ। হে নবী, আপনার উপর আল্লাহ’র শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক) আসসালামু আলায়না ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সোয়ালেহিন (আমাদের উপর এবং সৎকর্মশীল বান্দাদের উপর আল্লাহ’র শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতিত অন্য কোন ইলাহ নেই, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ (সা:) আল্লাহ’র বান্দা ও রাসুল।
দরুদ শরীফ:
আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাললাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর ঐরূপ রহমত/প্রশংসা অবতীর্ণ কর যেইরূপ রহমত/প্রশংসা হযরত ইব্রাহিম এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর অবতীর্ণ করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসাভাজন এবং মহামহিম। হে আল্লাহ, মুহাম্মদ (সা:) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর সেইরূপ অনুগ্রহ কর যে রূপ অনুগ্রহ ইব্রাহীম এবং তাঁহার বংশরগণের উপর করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসাভাজন এবং মহামহিম।
দোয়া মাসুরা:
আল্লাহুম্মা ইন্নি যলামতু নাফসি যুলমান কাসিরা। ওয়ালা ইয়াগ ফিরুয যুনুবা ইল্লা আনতা ফাগফির লি। মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা। ওয়ার হামনি। ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আমার নিজ আত্মার উপর বড়ই অত্যাচার করেছি, গুনাহ মাফকারী একমাত্র আপনিই। অতএব আপনি আপনার হতেই আমাকে সম্পূর্ণ ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি দয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল দয়ালু।
- আরো পড়ুন: কনডম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
- আরো পড়ুন: দুশ্চিন্তা দূর করার উপায়
- আরো পড়ুন: যে ৮ কারণে চুল পড়ে
৭. সালাম
উপরে বর্ণিত দোয়া পাঠ শেষে প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বামদিকে মাথা ঘুরিয়ে সালাম দিতে হবে। খুবই নম্রতার সাথে ও ধীরে উভয়দিকে মাথা ঘোরাতে হবে। দ্রুত এবং তাড়াহুরা করে সালাম ফেরানো একমদমই উচিত নয়। উভয় দিকে মাথা ঘুরিয়ে স্থিরাবস্থায় সালামের দোয়া পাঠ করতে হবে।
সালামের দোয়া:
আসসালামুআলাইকুম ইয়া রাহমাতুল্লাহ
অর্থ: আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
শেষ কথা
উপরোক্ত দীর্ঘ আলোচনায় আমরা নারীদের নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানলাম। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সুরা আল-মুদ্দাচ্ছিরে ৪২ থেকে ৪৩ আয়াতে বলেন, ‘কোন কাজ তোমাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে এল? তারা বলবে আমরা নামাজিদের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম না।’ সুতরাং আল্লাহ আমাদের আরও বেশি বেশি নামাজ আদায়ের মাধ্যমে জান্নাতের পথে এগিয়ে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।