জীবনী: জন ডালটন

জন ডালটন

ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন ডালটন আক্ষরিক অর্থে কোন বিজ্ঞানী ছিলেন না, বিজ্ঞান নিয়ে তিনি কোন উচ্চতার ডিগ্রী লাভ করেননি। তিনি বিজ্ঞানী হয়েছিলেন নিজের চেষ্টায় ও অধ্যবসায়ের গুণে। এই জন্যই তাকে বলা হয় স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানী। অথচ তিনি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

তিনি মূলত পদার্থের প্রাকৃতিক বিন্যাস ঘটিয়ে পদার্থের অনু-পরমাণুর বিশ্লেষণের মূল সূত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আজ পদার্থের পারমাণবিক বিশ্লেষণ ও বিভাজনই আধুনিক বিজ্ঞানের মূল সূত্র। এই সূত্র প্রতিষ্ঠায় তার অবদানই ছিল বড়। তিনি সর্বপ্রথম রসায়নবিদ্যাকে প্রকৃত বিজ্ঞান বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

বিজ্ঞানী জন ডালটনে জন্ম হয়েছিল উত্তর ইংল্যান্ডের ইগলস ফিল্ড নামে একটি গ্রামে ১৭৬৬ সালে ৬ সেপ্টেম্বর। তার যখন ১২ বছর বয়স তখন তিনি স্থানীয় কুম্বারল্যান্ডের একটি স্কুলে ভর্তি হন। দু’বছর পর তার ভাইয়ের সাথে এসে কেন্ডাল নামক স্থানে আরেকটি স্কুলে ভর্তি হন। এখানেই তিনি দীর্ঘ ১২ বছর কাটিয়েছিলেন এবং অংকশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে ডিগ্রী লাভ করেন।

পরে ম্যাঞ্চেস্টারের নিউ কলেজে এসে শিক্ষকতা শুরু করেন। তবে এই চাকরি তিনি বেশিদিন করেননি। ১৮০০ সালে শিক্ষকতার প্রতি একটি মোহ তার ছিলই। তাই তিনি স্থানীয় একটি প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অংক এবং রসায়নের শিক্ষক হিসেবেও একই সাথে কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন।

এরপর ১৮১৭ সালে তিনি দর্শন সোসাইটির সভাপতি মনোনীত হন। এই পদে তিনি আমরণ বহাল ছিলেন। জন ডালটনরা ছিলেন জর্জ ফক্স প্রতিষ্ঠিত খ্রিস্টধর্ম সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ গোষ্টির সদস্য। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা পরস্পর পরস্পরের প্রতি থাকতেন বিশ্বস্ত। তিনিও এই গোষ্ঠীর কর্মকর্তাদের আদেশ নির্দেশ রীতি-নীতি মেনে চলতেন।

তিনি যখন প্রথম জীবনে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন তখন এই কুয়েকার গোষ্টির জনৈক ধনী ও প্রভাবশালী সদস্যের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসেন। এই ধনী কুয়েকার শুধু একজন সম্পদশালী ব্যক্তিই ছিলেন না, তিনি একজন পন্ডিত ব্যক্তিও ছিলেন। তিনি আবহাওয়া এবং অঙ্কশাস্ত্র নিয়ে গবেষণা করতেন।

এর উপর তিনি প্রচুর নোটও তৈরি করেছিলেন। এই ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে জন ডালটনও অঙ্কশাস্ত্র এবং আবহাওয়া বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং এর উপর গবেষণা করতে থাকেন। জন ডালটনের প্রথাগত বৈজ্ঞানিক কাজ শুরু হয়েছিল ১৭৮৭ সাল থেকে এবং চলেছিল তার মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত।



এর আগে ঘটে আরো একটি ঘটনা ১৭৮৭ সালে উত্তর আকাশে দেখা দেয় চমৎকার বর্ণালির মেরুজ্যোতি। তিনি তখন মেরুজ্যোতি নিয়েও শুরু করেন গবেষণা। মেরুজ্যোতি প্রকাশের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি বলেন যে, আকাশে বিদ্যুৎপ্রবাহের গোলযোগের কারণেই এই জ্যোতি দেখা দেয় আকাশে।

মেরুজ্যোতি সম্পর্কে জন ডালটনের গবেষণা ছিল একান্তই মৌলিক এবং মেরুজ্যোতি সম্পর্কে তিনি যে সব মন্তব্য করেছেন তার আগে তা আর কেউ করতে পারেননি। মেরুজ্যোতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, আকাশের মেরুজ্যোতির রশ্মির সাথে পৃথিবীর চৌম্বকত্বের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

পৃথিবীর চুম্বকের আকর্ষণেই মেরুপ্রান্তে এ ধরনের আলোর ঝলক দেখা দেয়। আকাশের সূর্যরশ্মির আলোর কিরণরেখা আর একটি লৌহপাতের মধ্যে কাঠামোর প্রকৃতিগত দিক থেকে কোন পার্থক্য নেই। একটি লোহার পাতের মধ্যে পদার্থের যে পরমাণু কণিকাসমূহ আছে ভাসমান অবস্থাযন তেমনি আলোর কণিকাগুলোর মধ্যে ভাসমান আছে।

হয়তো লোহার পাতের কণিকাগুলো সহস্রগুণে ঘন হয়ে সন্নিবেশিত আছে, তাই তার অস্তিত্ব চোখে পড়ে, কিন্তু আলোর কণিকাগুলো পাতলা, তাই অস্তিত্ব অনুভূত হয় না। তবে দুটোর কণিকাই মূলত এক। আর এ কারণেই একটি আরেকটিকে আকর্ষণ করে। পৃথিবীর পরিক্রমণ ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে আয়নবায়ুর উৎপত্তির যে সম্পর্ক সে বিষয়ে তিনি তার মৌলিক মতবাদ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

অবশ্য এখানে একটি মজার ঘটনা রয়েছে। জন ডালটন তার এই মতবাদ দিয়েছিলেন আর ১৭৮৭ সালের পর। কিন্তু তারও বহু আগেই ১৭৩৫ সালেই এই সম্পর্কে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানী জর্জ হ্যাডলি। কিন্তু জন ডালটন হ্যাডলির এই গবেষণার কথা কিছুই জানতেন না।

আর কিছু না জেনেই তিনি নিজস্ব বুদ্ধি বিবেচনার উপর নির্ভর করেই গবেষণা করেছেন এবং হ্যাডলির অনুরূপ ফলাফল পেয়েছেন। বিজ্ঞান জগতে এমন ক্ষ্যাপা পাগলের সংখ্যা একেবারেই বিরল। তবে ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সহজ সরল মানুষ। তার না ছিল পোশাকের বাহাদুরী, না ছিল শৌখিনতা।

তিনি বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করলেও নিজস্ব ধর্মীয় মতাদর্শ অর্থাৎ কুয়েকার সম্প্রদায়ের রীতিনীতি মেনে চলতেন। তাদের পোষাক পরিধান করতেন। অতি সাধারণ পোশাক। এই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিলাসিতা নিষিদ্ধ। এই গবেষণা পাগল বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয় ১৮৪৪ সালের ২৭ শে জুলাই।

ডালটন আক্ষরিক অর্থে বিজ্ঞানী ছিলেন না। বিজ্ঞানের উপর তার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও ছিল না। অথচ তিনি একক প্রচেষ্টাতেই করেছিলেন বহু রকমের মৌলিক আবিষ্কার। স্বীকৃতি পেয়েছিলেন বিশ্বের অন্যতম একজন সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে।



যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। বিভিন্ন শ্রেনির সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। নতুন নতুন সব শিক্ষামূলক ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন।

বি: দ্র: তোমার নিজের রচিত কবিতা, সাহিত্য বা যেকোনো শিক্ষামূলক লেখা পাঠিয়ে দাও এডুয়েটিক’র কাছে। এডুয়েটিক প্রকাশ করবে তোমার প্রিয় লেখাটি।

Leave a Comment