উকুন দূর করার উপায়

উকুন দূর করার উপায়

আজকে আমরা এডুয়েটিকের স্বাস্থ্য বিভাগে আলোচনা করবো উকুন দূর করার উপায় সম্পর্কে। তাহলে চলুন আর দেরি না আজকে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। মাথায় উকুন নিয়ে মুশকিলে পড়েননি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে।

একবার উকুন হলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়। সঠিক উপায়ে নিজের যত্ন না নিলে উকুন তো হবেই! অনেকে রয়েছে যারা অন্যের চিরুনি ব্যবহার করেন, চিরুনি ঠিকভাবে পরিষ্কার করেন না, অন্যের তোয়ালে-বালিশ ব্যবহার করে থাকেন। এইসব কারণসব আরও বিভিন্ন কারণে ছড়াতে পারে উকুন।

নিয়মিত চুল পরিষ্কার না করলে, স্ক্যাল্প পরিষ্কার না করলেও উকুন হতে পারে। তাই চুল ও স্ক্যাল্প নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত। নয়তো উকুনের সমস্যা বাড়বে। এই সমস্যা দূর করার জন্য কার্যকরী হতে পারে বিভিন্ন উপায়। তবে সব উপায় যে কাজ করে তা কিন্তু নয়। তাই উকুন দূর করতে হলে বেছে নিতে হবে কার্যকরী উপায়গুলোকে।



তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক উকুন দূর করার উপায় সম্পর্কে:-

অলিভ অয়েল

চুল ভালো রাখার জন্য বিশেষ উপকারী হলো অলিভ অয়েল। চুলের আর্দ্রতা ধরে রেখে চুল ভালো রাখতে কাজ করে এটি। সেইসঙ্গে অলিভ অয়েল কিন্তু উকুন দূর করতেও সমান কার্যকরী। তাই এখন থেকে উকুন দূর করার কাজে লাগাতে পারেন উপকারী এই তেল। প্রথমে পরিমাণমতো অলিভ অয়েল নিন। এরপর তা স্ক্যাল্পে ভালো করে মাসাজ করুন। সেইসঙ্গে চুলেও লাগিয়ে নেবেন। এরপর চুল ভালো করে বেঁধে রাখুন। মাথায় একটি শাওয়ার ক্যাপ পড়ে ঘুমাতে যান। পরদিন সকালে একটি চিকন দাঁতের চিরুনি নিন। সেটি দিয়ে ভালো করে চুল আঁচড়ে নিন। তারপর শ্যাম্পু করে নিন। এভাবে সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করলে দ্রুতই উকুন চলে যাবে।

টি ট্রি অয়েল

উকুন দূর করার জন্য সাহায্য নিতে পারেন এসেনশিয়াল অয়েলের। এর মাধ্যমে আপনি সহজেই উকুন দূর করতে পারবেন। এই পদ্ধতি কীভাবে কাজে লাগাবেন সেটি জানা জরুরি। এক্ষেত্রে টি ট্রি অয়েল কার্যকরী। এই তেলে আছে অ্যান্টি ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল উপাদান। যা উকুন বা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। টি ট্রি অয়েল উকুন ও উকুনের ডিম নষ্ট করে দিতে কাজ করে। স্ক্যাল্পে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল নিন। এবার মাথায় ভালো করে মাসাজ করে নিন। এরপর চুল ভালো করে বেঁধে রাখুন। এভাবে রেখে দিন ঘণ্টা ২ থেকে ৩। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এভাবে প্রতি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন। এক মাস ব্যবহার করলেই উকুন দূর হবে।

রসুন

উকুনের উপদ্রব দমন করার জন্য রসুনের এই পদ্ধতিটি অনেক প্রাচীন এবং বেশ কার্যকরী। ঘরোয়া উপায়ে রসুনের মাধ্যমে উকুনের চিকিৎসা করতে গেলে রসুনের তীব্র গন্ধ আপনাকে সহ্য করতে হবে। প্রথমে ৮ থেকে ১০ টা রসুনের কোয়া থেতলে পেস্ট বানিয়ে নিন এবং তাতে কয়েক চা-চামচ লেবুর রস মেশান। তারপর সেই মিশ্রণ আপনার চুলের ত্বকে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। রসুনের তীব্র গন্ধ উকুন এবং উকুনের ডিম ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। এই ঘরোয়া চিকিৎসা সপ্তাহে একদিন করে কয়েক মাস চালু রাখলে উকুন থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

নিম ব্যবহার

নিম যে শুধু ত্বক ভালো রাখা আর বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ দূরে রাখতে কাজ করে তাই নয়, এটি উকুন দূর করতেও সমান কার্যকরী। এক্ষেত্রে আপনি ব্যবহার করতে পারেন নিম তেল। কিংবা নিম পাতার পেস্টও সমান উপকারী। প্রথমে নিন এক কাপ নিম পাতা। এবার সেই পাতা ভালো করে ফুটিয়ে পানিটুকু ছেঁকে নিন। পাতাগুলো পেস্ট করে মাথার ত্বকে ও চুলে লাগিয়ে নিন। এভাবে ২ ঘণ্টার মতো রেখে নিমের পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ১ বার এভাবে ব্যবহার করবেন। এছাড়া নিমের তেলও ব্যবহার করতে পারেন। রাতে তেল লাগিয়ে নিন। সকালে উঠে শ্যাম্পু করে নেবেন।

নারকেল তেল

উকুন থেকে রেহাই পেতে নারকেল তেল হল অন্যতম কার্যকরী একটি ঘরোয়া টোটকা। মেয়নেজ এবং টি ট্রি অয়েল দিয়ে যেভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে উকুন মারা হয়, ঠিক একই পদ্ধতি অবলম্বনে নারকেল তেল দিয়ে উকুনের বংশ নিপাত করা সম্ভব। নারকেল তেল উকুনদের শুধু শ্বাসরুদ্ধই করে না বরং তাদের একজায়গায় আটকে ফেলে, যাতে তারা অন্য কোথাও পালাতে না পারে।

পেট্রোলিয়াম জেলি

নারকেল তেলে অনেকের অ্যালার্জি থাকে। তাই তাদের জন্য উকুন তাড়ানোর বিকল্প পদ্ধতি হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি এমন একটি কার্যকরী উপাদান যা আপনার ড্রয়ারে বা এখানে ওখানে হয়তো রয়েছে। পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়েও মেয়োনেজ, নারকেলের তেলের মতো পদ্ধতিতে উকুন তাড়ানো সম্ভব। কিন্তু পেট্রোলিয়াম জেলির একটা সমস্যা হচ্ছে তা পরিষ্কার করা বেশ ঝামেলার কাজ। বেশ কয়েকবার ধোয়ার পরেও তা পরিষ্কার হতে চায় না। তবে, যাদের চুল ছোট তাদের জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি একটি ভালো উপাদান হিসেবে কাজে দিতে পারে, কেননা তাদের ক্ষেত্রে পরিষ্কার করার ঝামেলা তুলনামূলকভাবে কম।

চুল ব্লো ড্রাই করুন

চুল ব্লো ডাই করলেও কিন্তু উকুন দূর হয়। ব্লো ড্রায়ারের সাহায্যে খুব সহজেই উকুন দূর করতে পারবেন। তাই এটি শুধুই স্টাইলিং এর জন্যই নয়, বরং ব্যবহার করা যাবে এই কাজেও। এক্ষেত্রে সরাসরি ব্লো ড্রায়ার চুলে ব্যবহার করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে তাপমাত্রার দিকে। হেয়ার ড্রায়ার অন করে সেটি চুলে ধরুন। তাপমাত্রা অল্প রাখবেন। অতিরিক্ত গরম করবেন না। এতে চুল ও স্ক্যাল্পের ক্ষতি হবে। বেশ কিছুক্ষণ ব্লো ডাই করে চুল আঁচড়ে নিন। এভাবে কয়েকদিন করলে উকুন দূর হবে।

ভেজা চুলে চিরুনি করা

ভিন নিগুয়েন নামে একজন আমেরিকান ত্বক বিশেষজ্ঞ বলেন, চুল ভেজা থাকা অবস্থায় সামান্য কন্ডিশনার চুলে মাখিয়ে চিরুনি করলে উকুন থেকে বেশ সহজেই রেহাই পাওয়া যায়। ঘরোয়া নানান টোটকাগুলোর মধ্যে এটা বেশ কার্যকরী। সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ দিন করে কয়েক সপ্তাহ এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া অন্যান্য প্রাকৃতিক পদ্ধতির সাথে সহযোগী উপায় হিসেবে এটি ব্যবহার করা সম্ভব।



যেসব বিষয় খেয়াল রাখবে

১. চুলে বার বার শ্যাম্পু না করাই ভালো। বেশি শ্যাম্পু ব্যবহার করে উকুন দূর করা যায় না বরং এতে উকুনের লাভ হয়। বার বার শ্যাম্পু করার ফলে মাথার ত্বকের তেল ধুয়ে চলে যায়, ফলে রক্ত নিতে উকুনের আরও বেশি সুবিধা হয়।

২. মাথা থেকে উকুন এবং উকুনের ডিম দূর করলেই যে উকুন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। বিছানা, বালিশ, তোয়ালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

৩. কখনো নিজের চিরুনি, বালিশ, হেয়ার ব্যান্ড, তোয়ালে, কাপড় ছাড়া অন্যেরটা ব্যবহার করবেন না।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। বিভিন্ন শ্রেনির সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। নতুন নতুন সব শিক্ষামূলক ও বিনোদনমূলক ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং বেল আইকনে ক্লিক করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *