জীবনী: গুলিয়েলমো মার্কোনি

গুলিয়েলমো মার্কোনি

জীবনী: গুলিয়েলমো মার্কোনি

বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে টেলিফোন, গ্রামোফোন, রেডিও, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, মোটর গাড়ি ও এরোপ্লেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়কর আবিষ্কার হচ্ছে রেডিও। পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে একটা লোকের কণ্ঠস্বর সারা পৃথিবীর মানুষ একই সাথে শুনতে পারে। এই রেডিওর আবিষ্কারক করছেন হচ্ছেন দি মার্কিস গিলেরসো মার্কোনি।

ইতালির বলোনিয়া শহরে ১৮৭৪ সালে ২৫ এপ্রিল মার্কোনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন ইতালির এক ধনী ব্যক্তি, মা ছিলেন আয়ারল্যান্ডের। এই রেডিও আবিষ্কারের আগে মানে মার্কোনির জন্মের আগে আকাশ পথে দূর-দূরান্তে শব্দ ও ধ্বনি প্রেরণের বিষয়ে বৈজ্ঞানিক কাজ হয়েছিল। ১৮৬৪ সালে অঙ্ক শাস্ত্রের প্রতিভাবান বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক বলেছিলেন বিদ্যুৎ তরঙ্গের অস্তিত্ব আছে।

যার থেকে জানা যায় বেতার তরঙ্গের দ্রুতি ও বেতার তরঙ্গের দৈর্ঘ্য নির্ণয় করেন। দুঃখের কথা ম্যাক্সওয়েলের এই কথা পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত না হওয়ায় কেউই তার তত্ত্বকে সম্মান করেনি বরং তাকে বিদ্রুপ করেছে। তবে ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বকে স্বীকৃতি দিতে এগিয়ে এলেন বিখ্যাত জার্মান পদার্থবিদ হেনরিখ রুডলফ হার্জ।

হার্জের আবিষ্কার ১৮৮৭ ও ১৮৮৯ সালের মধ্যে খুব জনপ্রিয়তা পায়, বহু বিজ্ঞানী বেতার তরঙ্গের উপর গবেষণা করতে লাগলেন। এদের মধ্যে আছেন ইংল্যান্ডের আলিভার নাজ, রাশিয়ার আলেকজান্ডার পোপোভ, ভারতের জগদীশচন্দ্র বোস, সত্যেন বোস আরও অনেক বিজ্ঞানী, ইতালির অগাস্ট রিঘি তখন বোলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক, রিঘির ছাত্র ছিলেন তরুণ যুবক মার্কোনি।

হার্জের আবিষ্কারের সময় মার্কোনির বয়স ছিল পনের বছর। মার্কোনি তার গৃহ শিক্ষকদের কাছ থেকে ব্যাপারটা বুঝে নেন। সেই তখন থেকেই তিনি এই বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করতে থাকেন। তিনি ছিলেন ধনী ঘরের ছেলে। তাই বাড়িতে বসেই শিক্ষকদের কাছ থেকে পড়তেন। ১৮৯৫ সালে নিজের বাড়িতে বসে পরীক্ষা চালান। পুরানো সব যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ শুরু করেন।



প্রথমে তিনি বেতার সংকেতের কার্যকরী পদ্ধতি তৈরি করেন। এর সাহায্যে তিনি এক মাইল দূরে বেতার বার্তা পাঠাতে পারেন। ১৮৯৬ সালে তিনি দুই মাইল দূরত্বে বেতার বার্তা পাঠাতে পারেন। মার্কোনি তার এই আবিষ্কারের কথা ইতালি সরকারকে জানাল। কিন্তু ইতালি সরকার তাকে অবজ্ঞা করে উড়িয়ে দিলেন, সেই বছরই তিনি ইংল্যান্ডে আসেন তার যন্ত্রের পেমেন্ট করতে।

এখানে এসে ডাকঘরের প্রধান ইঞ্জিনিয়ারের সাথে তার পরিচয় হয়। তিনি তাদের দেখালেন দশ মাইল পর্যন্ত বেতার বার্তা পাঠানো যায়। যার ফলে ইতালির সরকার মার্কোনির মূল্যটা বুঝতে পারল। তাই সঙ্গে সঙ্গে মার্কোনিকে আমন্ত্রণ জানালেন ও এক বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে দিলেন। এখানে বার মাইলম দূরে যুদ্ধ জাহাজে বেতার বার্তা পাঠানো যায়।

দূরত্ব ক্রোমশ বাড়তে থাকে, এর সাথে বিজ্ঞানীরাও বুঝতে পারলেন এর গুরুত্ব ভবিষ্যতের সম্ভাবনার কথা। ১৮৯৭ সালে মার্কোনি তার আবিষ্কার ইতালির সম্রাট হামবার্ট ও রানী মারগেরিটারের সামনে প্রদর্শন করেন। সেই সময় তিনি জায়গায় বেতার স্টেশন তৈরি করেন। ১৮৯৯ সালে মার্কোনির আবিষ্কারের সম্পর্কে সাধারণ মানুষেও সজাগ হয়ে উঠেন।

কারণ সেই বছরেই একটি স্টিমারের সাথে সংঘর্ষে আরোর ইস্ট গুডউইন জাহাজ ডুবে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় বেতারবার্তা পাঠানো হল লাইটহাউসে, সাথে সাথে নৌকা পাঠিয়ে নাবিকদের জীবন বাঁচানো হল। এরপর ইংলিশ চ্যানেলের এপার থেকে ওপারে বেতার যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তারপর মার্কোনি আটলান্টিক মহাসাগরের এপার থেকে ওপারে বেতারবার্তা পাঠানোর কাজ লেগে যান।

১৯০১ সালে ১২ই ডিসেম্বরে তিনি সফল হন। ১৯০৫ সালে বেতার যন্ত্রে আরও উন্নতি ঘটে। বেতার গ্রাহক যন্ত্রের সমস্ত অসুবিধাগুলো দূর হয়ে যায়। ১৯১১ সাল থেকে ১৯৩৪ সালের মধ্যে বেতারবার্তা পাঠানো পদ্ধতি অনেক উন্নত হয়। যার ফলে তখনই রেডিও তৈরি হয়। ১৮৯৫ সাল থেকে ১৯৩৫ সালের মধ্যে মার্কোনি প্রচুর পুরস্কার ও সম্মান পান। ১৯০১ সালে তিনি পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান। তাকে ‘দি মার্কিন’ – এ ভূষিত করা হয়। ১৯৩৭ সালে তার মৃত্যু হয়।



যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। বিভিন্ন শ্রেনির সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। নতুন নতুন সব শিক্ষামূলক ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন।

বি: দ্র: তোমার নিজের রচিত কবিতা, সাহিত্য বা যেকোনো শিক্ষামূলক লেখা পাঠিয়ে দাও এডুয়েটিক’র কাছে। এডুয়েটিক প্রকাশ করবে তোমার প্রিয় লেখাটি।

Leave a Comment