তারাবির নামাজের নিয়ম

আমরা অনেকেই তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানি না। আবার লজ্জায় কারো কাছে জিগ্যেসও করতে পারি না। তাই এডুয়েটিকের ধর্মকথা বিভাগে আজ আমরা তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নিবো। রমজান মাসের রাতের একটি বিশেষ ইবাদত হলো তারাবিহ নামাজ। তারাবিহ (تَرَاوِيْح) শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো বিশ্রাম করা। অর্থাৎ দীর্ঘ কেরাতে এ নামাজ পড়ার কারণে ৪ রাকাআত পরপর বিশ্রাম নিয়ে এ নামাজ পড়া হয় বিধায় এটিকে তারাবিহ নামকরণ করা হয়। তারাবিহ নামাজ সাধারণত রমজান মাসেই আদায় করা হয়।



তারাবির নামাজের নিয়ম

দীর্ঘ ১১ মাস এ নামাজের চর্চা না থাকায় অনেকেই এ নামাজের নিয়ম প্রচলিত দোয়া ও মুনাজাতগুলো ভুলে যায়। যে কারণে রমজান এলেই তা স্মরণ করিয়ে দিতে আমাদের এ প্রচেষ্টা। দীর্ঘ কেরাতের এ নামাজ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-

হজরত সাঈর ইবনে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের রাতের (তারাবি হতে) নামাজে শত শত (শ’-এর ওপর) আয়াত পড়তেন। ফলে সুদীর্ঘ সময় দাঁড়ানোর কারণে আমরা লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। (মুয়াত্তা মুহাম্মদ)

রমজানের রাতের বিশেষ ইবাদত তারাবিহ নামাজের আছে তাৎপর্যপূর্ণ ফজিলত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবিহ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন-

‘যে ব্যক্তি রমজানের রাতের (তারাবিহ) নামাজ ঈমানের সাথে সাওয়াবের নিয়তে পড়বে, তার জীবনের পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ সুবহানাল্লাহ!

তারাবিহ নামাজের নিয়ত

রমজান আসলেই অনেকে তারাবিহ নামাজের নিয়ত খুঁজতে থাকে। নিয়ত আরবিতে করতে হবে এমন কোনও নিয়ম নেই। নিয়ত হলো নামাজ পড়ার জন্য মনের ইচ্ছা বা সংকল্প। এ ইচ্ছা বা সংকল্প আরবি কিংবা বাংলায় করা যায়।

তারাবিহ নামাজ দুই দুই রাকাআতে আদায় করতে হয়। তাই এভাবে নিয়ত করা-

তারাবিহ-এর দুই রাকাআত নামাজ ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য (জামাআত হলে- এ ইমামের পেছনে) পড়ছি- (اَللهُ اَكْبَر) আল্লাহু আকবার।

তারাবিহ পড়ার নিয়ম

২ রাকাআত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা। আবার ২ রাকাআত নামাজ পড়া। এভাবে ৪ রাকাআত আদায় করার পর একটু বিশ্রাম নেওয়া। বিশ্রামের সময় তাসবিহ তাহলিল পড়া, দোয়া-দরূদ ও জিকির আজকার করা। তারপর আবার দুই দুই রাকাআত করে আলাদা আলাদা নিয়তে তারাবিহ আদায় করা।

তারাবিহ নামাজের দোয়া

৪ রাকাআত তারাবিহ আদায় করার পর ব্যাপক প্রচলিত একটি দোয়া আছে। যা দেশের প্রায় মসজিদে পড়া হয়। আর তাহলো-

سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ

উচ্চারণ: ‘সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।’

উল্লেখ্য তারাবিহ নামাজের ৪ রাকাআত পর পর পড়ার এ দোয়াটি ব্যাপক প্রচলিত। তবে এ দোয়ার সাথে তারাবিহ নামাজ হওয়া কিংবা না হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। এমন নয় যে, এ দোয়া না জানলে তারাবিহ নামাজ আদায় হবে না। বরং যেকোনো দোয়াই পড়া যাবে। তবে এ সময়টিতে কুরআন-সুন্নাহর দোয়াগুলো পড়াই উত্তম।

তারাবিহ নামাজের মুনাজাত

অনেকেই ৪ রাকাআত পর পর মুনাজাত করে থাকে। আবার অনেকে পুরো নামাজ শেষ করে মুনাজাত করে থাকে। তবে নামাজ শেষ করে বিতর পড়ে মুনাজাত দেওয়াই উত্তম। মুনাজাতের ক্ষেত্রেও একটি দোয়া ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এ মুনাজাতটিকেও অনেকে আবশ্যক মনে করে। কেউ কেউ এমনও মনে করে যে, এ দোয়াটি ছাড়া তারাবিহ নামাজের মুনাজাত হবে না।এটি মোটেও ঠিক নয়। তবে এ দোয়ায় মুনাজাত দিলে গোনাহ হবে তা নয়। মুনাজাতটি হলো-

اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’

উল্লেখ্য, রমজান জুড়ে বিশ্বনবির এ দোয়াগুলো বেশি বেশি করা জরুরি। আর তাহলো-

– اَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ اﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আ’ন্নি।



তাছাড়া তারাবিহ নামাজের পর সাইয়্যিদুল ইসতেগফারও পড়া যেতে পারে-

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’

মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহাঅনুগ্রহের মাস রমজান। এ মাসের মর্যাদা অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি। এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হলো কিয়ামুর রমজান তথা তারাবিহ নামাজ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে তারাবিহ নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। রাতের নামাজ (তারাবিহ) আদায়েল মাধ্যমে বিগত জীবনের সব গোনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

সুবহানাল্লাহ

সুবহানাল্লাহ কখন ও কেন বলবেন?

এডুয়েটিকের ধর্মকথা বিভাগে আজ আমরা সম্পর্কে আলোচনা করবো সুবহানাল্লাহ কখন ও কেন বলবেন? তাহলে চলুন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *